গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের পর্দা উঠছে কাল

গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম | ছবি: সংগৃহীত
0

খুলে যাচ্ছে মানবসভ্যতার পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাসের দরজা। পর্দা উঠবে মিশরের নতুন গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের। শুধু প্রাচীন সভ্যতা গড়ে ওঠা নীল নদ বা পিরামিড নয়, গিজায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের আরেক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে বিশাল এ জাদুঘর, এমনটাই প্রত্যাশা মিশরের।

নীলনদের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত গির্জা, পিরামিডের জন্য বিখ্যাত এ শহরের নতুন পরিচয়- নতুন গ্র্যান্ড ইজিপ্শিয়ান মিউজিয়ামের শহর বলেও। ২০ বছরের বেশি সময়ের পরিকল্পনা আর নির্মাণকাজ শেষে শনিবার দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলবে বিশাল এ জাদুঘরের দরজা।

মানবসভ্যতার পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস বহন করছে নতুন এ জাদুঘর। গির্জার পিরামিডের পাশেই অবস্থিত জাদুঘরটির প্রধান প্রবেশপথে পা রাখতেই চোখে পড়বে, সিঁড়িতে সাজানো সারি বেঁধে থাকা ফারাও ভাস্কর্য। খুফুর পিরামিডের পাশে মাটির নিচে লুকোনো রাজা তুতেনখামেনের ধনসম্পদ আর সৌরশক্তিচালিত নৌকা, যেগুলো আজ অবধি জনসাধারণের চোখের আড়ালে, সেসবকিছু এবার দেখা যাবে এই জাদুঘরে। শোভা পাবে মিশরের ঊনবিংশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও রাজা দ্বিতীয় রামসেসের বিশাল ভাস্কর্য।

আরও পড়ুন:

মিশরের গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতাত্ত্বিক আলিয়া ইউসুফ বলেন, ‘মিশরের প্রথম রাজধানী মেমফিসের মিত রাহিনা শহরে দেবতা তাহ'র মহা মন্দিরে ১৯ শতকে এই ভাস্কর্যের সন্ধান মেলে। মূর্তিটি কয়েক টুকরো অবস্থায় পাওয়া গেলেও পরে জোড়া লাগানো হয়।’

বর্তমানে জাদুঘরের গ্র্যান্ড হল অংশে দ্বিতীয় রামসেসের ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে। তারও আগে সুদূর রাজধানী থেকে ২০০৬ সালে নির্মাণাধীন নতুন জাদুঘরের প্রথম শিল্পকর্ম নিয়ে আসা হয় গ্রানাইটে খোদাই করা ৩২০০ বছরের পুরোনো ১১ মিটার উঁচু ও ৮৩ টন ওজনের মূর্তিটি। কায়রোর রামসেস স্কয়ার থেকে গিজার জাদুঘর পর্যন্ত এটি আনতে ১০ ঘণ্টার যাত্রায় খরচ হয়েছিল বর্তমান মুদ্রায় দুই লাখ ৮৫ হাজার ডলার।

মিশরের গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতাত্ত্বিক আলিয়া ইউসুফ বলেন, ‘বিদেশি পরামর্শকদের অনেকেই বলেছিলেন যে এই আকারের মূর্তি সরানো অসম্ভব। তাই প্রথমে মূল মূর্তির সমান ওজন ও উচ্চতার একটি মডেল ব্যবহার করে পরীক্ষা চালানো হয়, যা সফলও হয়েছিল। পরে ২০০৬ সালে আসল স্থানান্তর ঘটে। রামসেস স্কয়ারের বাব আল-হাদিদ থেকে মূর্তিটি গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে নিয়ে আসা হয়। অত্যন্ত সফল অভিযান ছিল। মূর্তি পরিবহনে ব্যবহৃত যান কম্পন শোষণে বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছিল। সুরক্ষার জন্য মূর্তিটি অতি সতর্কতার সাথে ফোম প্যাডিং দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।’

জাদুঘরের নিজস্ব ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ১১৭ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়ার মাধ্যমে ১৯৯২ সালে শুরু হয় জাদুঘরের কাজ। এ হিসেবে আয়তনে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এ জাদুঘর। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০০২ সালে।

তারপরের বছর জাদুঘরের নকশা তৈরিতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জিতে কাজ শুরু করে আয়ারল্যান্ডের স্থাপত্য সংস্থা হেনইগান পেং আ। ২০০৫ থেকে ০৮ সালের মধ্যে শুরু হয় নির্মাণকাজ। ২০১০ সালে উন্মুক্ত করা হয় জাদুঘরের কনজারভেশন সেন্টার, যেখানে রয়েছে প্রাচীন সব শিল্পকর্ম।

শুরুতে ২০১২ সালে জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা থাকলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতা, করোনাভাইরাস মহামারি আর নির্মাণব্যয় বেড়ে চলায় বিলম্বিত হয় পুরো প্রক্রিয়া। তবে দেরিতে হলেও সারা বিশ্বের অন্যতম দর্শনার্থী প্রিয় সাংস্কৃতিক গন্তব্য হয়ে উঠবে নতুন এ জাদুঘর, এমনটাই প্রত্যাশা মিশর সরকারের। জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে যোগ দেবেন ৪০ জনের বেশি বিশ্বনেতা।

সেজু