দীর্ঘদিন ধরেই প্রাণঘাতী রোগ ক্যান্সারের ওপর ওপর করোনা প্রতিরোধক এমআরএনএ টিকার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি এন্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের একদল গবেষক। সম্প্রতি জার্মানির বার্লিনে এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন তারা।
গবেষকেরা জানান, করোনার সংক্রমণ রোধ করার উদ্দেশ্যে তৈরি এমআরএনএ টিকা সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে টিউমারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন অন্যান্য টিকার চেয়ে আলাদাভাবে কাজ করে। এই টিকার মাধ্যমে ভাইরাসের একটি ছোট জেনেটিক কোড -মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ সরাসরি দেহের কোষে প্রবেশ করানো হয়।
এতে কোষগুলো ভাইরাসের মতোই একটি ‘স্পাইক প্রোটিন’ তৈরি করে। এরপর দেহে অ্যান্টিবডি ও মেমোরি সেল তৈরি হয়। ফলে, পরে কখনো একইরকম ক্ষতিকারক স্পাইক প্রোটিন তৈরি হলে সেটিকে দ্রুত আক্রমণ করতে পারে।
বেশ কয়েক বছর ধরে চলা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এলিয়াস সায়ুর।
২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া ১ হাজারেরও বেশি রোগীর ক্লিনিক্যাল তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যেসব রোগী ইমিউনোথেরাপি শুরু করার ১০০ দিনের মধ্যে করোনার টিকা নিয়েছিলেন, তারা টিকা না নেওয়া রোগীদের তুলনায় বেশি সময় বেঁচে ছিলেন।
আরও পড়ুন:
ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এমডি এন্ডারসন ক্যান্সার সেন্টারের পিএইচডির এমডি অ্যাডাম গ্রিপিন বলেন, ‘ভ্যাকসিন ব্যবহারের পর কিছু রোগী চমৎকার সাড়া দিয়েছে, তবে এখনো অনেক রোগী আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছে না। আমরা আরো কাজ করছি। এই টিকা শক্তিশালী অ্যান্টি-টিউমার ইমিউন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম, যা ক্যান্সার রোগীদের বেঁচে থাকার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।’
তবে গবেষকেরা স্বীকার করেছেন, এ প্রক্রিয়ার সঠিক কার্যপ্রণালী এখনও পুরোপুরি বোঝা না গেলেও তাদের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী করোনার টিকা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সক্ষম ।
যদিও এই গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধে এমআরএনএ টিকা প্রয়োগের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় বড় বিপ্লব ঘটতে পারে।
স্টপ চিলড্রেন’স ক্যান্সার/বনি আর. ফ্রিম্যান পেডিয়াট্রিক অনকোলজি রিসার্চের পিএইচডির এমডি ইলিয়াস সায়ুর বলেন, ‘এর প্রভাব অসাধারণ এটি ক্যান্সার চিকিৎসার পুরো ক্ষেত্রে বিপ্লব আনতে পারে। আমরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আরও ভালো একটি অনির্দিষ্ট ভ্যাকসিন ডিজাইন করতে পারি। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্য এটি সমস্ত ক্যান্সার রোগীর জন্য একটি সর্বজনীন, অ-শেল্ফ ক্যান্সার ভ্যাকসিন হতে পারে।’
এদিকে গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর এমআরএনএ টিকা প্রয়োগ করে দেখেছেন, টিউমারের ভেতরে সরাসরি এমআরএনএ টিকার ইনজেকশন দিলে ডেনড্রিটিক সেল বা শ্বেত রক্তকণিকা আরও সতর্ক হয়। ডেনড্রিটিক সেলগুলো যখন টিউমারের উপস্থিতি শনাক্ত করে, তখন তারা টি-সেল নামের প্রতিরোধক কোষগুলোকে সেখানে নিয়ে যায় এবং টিউমারকে আক্রমণ করে।
কিছু ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, এ প্রক্রিয়া ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়ার হার কমিয়ে দেয়। তবে সবার শরীরে স্বাভাবিকভাবে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসকারী টি-সেল থাকে না। আর এটি না থাকায় ইমিউন সিস্টেম টিউমারকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলেও কীভাবে তা ধ্বংস করতে হয় বুঝে উঠতে পারে না। এ কারণে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি বা ক্যানসার মোকাবিলায় দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করার পদ্ধতি ক্ষেত্রে তেমন ফল দেয় না।





