২০০৫ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় গাজা থেকে ইসরাইল সরে যাওয়ার পরের বছরই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠায় জয়ী হয় হামাস। উপত্যকাটিতে সরকার গঠন করে তারা। তবে নির্বাচনে বেশি আসন পেয়েও পশ্চিম তীরের ক্ষমতা পায়নি হামাস।
ফিলিস্তিনের প্রধান রাজনৈতিক দল ফাতাহ এবং পশ্চিমা সমর্থকরা হামাসকে পশ্চিম তীর থেকে সরিয়ে দেয়। ফলে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। অবশেষে ২০০৭ সালে গাজার ক্ষমতা চলে যায় হামাসের হাতে। এরপর থেকে গাজায় আর নির্বাচন হয়নি।
এরপর দুই দশকের বেশি সময় ধরে গাজার শাসন চালিয়ে যাচ্ছে মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাস। তবে গেলো ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও আত্মসমর্পণের কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল।
আরও পড়ুন:
তবে আদৌ কী হামাস সেই পথে হাঁটবে কি-না তা নিয়ে রয়েছে অনেক বড় প্রশ্ন। এছাড়া কীভাবেই বা এতো লম্বা সময় ধরে গাজায় শাসন চালিয়ে যাচ্ছে হামাস। এ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির দুই দিনের মাথায় হামাসের বিরুদ্ধে গাজার ফিলিস্তিনি হত্যার অভিযোগ তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর হামাস যদি তাদের এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায় তবে এর সদস্যদের হত্যা করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান তিনি।
গেল দুই বছরের গাজা যুদ্ধে এরই মধ্যে হামাসে শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছে আইডিএফ। উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ। এছাড়াও ধ্বংস করে দিয়েছে হামাসের গোপন সুড়ঙ্গ ও তাদের বাঙ্কার।
এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও হামাস কীভাবে টিকে রয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে তারা কীভাবে শাসন পরিচালনা করবে তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। যদিও এরইমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিশ্ববাসীকে হামাস সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা ক্ষমতা ত্যাগ করবে না এমনকি অস্ত্র সমর্পণও করবে না।
এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গাজায় এখনও দাপটের সঙ্গে আধিপত্য করছে হামাস। এমনকি সামনের দিনে ক্ষমতা ছাড়ার কোনো লক্ষণ নেই গোষ্ঠীটির মধ্যে।
হামাসের শাসনামলে বহুবার গাজায় অর্থনৈতিক ব্লকেড তৈরি করেছে ইসরাইল। এমনকি ২০০৮-০৯, ২০১২, ২০১৪ ও সবশেষ ২০২১ সালে আইডিএফের সঙ্গে সহিংস সংঘাতে জড়ায় তারা। পশ্চিমাদের অভিযোগ, হামাস সবসময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে।
২০০০ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরুর পর গোপন সুড়ঙ্গ থেকে ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলা চালায় হামাস। ২০০৬ সালেও ইসরাইলের ২ সেনাকে অপহরণ করে তারা। ৫ বছর পর তাদের মুক্তির বিনিময়ে প্রায় ১ হাজার ফিলিস্তিনিকে ছাড়তে বাধ্য হয় ইসরাইল।
এরপর থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির নিচে গোপন সুড়ঙ্গ বাড়াতে থাকে হামাস। মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে যায় তা। মাটির ২৩০ ফুট নিচেও হামাসের সুড়ঙ্গ রয়েছে বলে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের দাবি।
আর সেখানেই গড়ে তোলে বিপুল অস্ত্রের ভাণ্ডার। বানিয়েছে বাঙ্কার। আর তাদের এই কাজে আর্থিক সহায়তা দেয় ইরান। ২০২০ সালে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, প্রতিবছর হামাসকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয় ইরান।
তবে এবারের যুদ্ধ হামাসের এসব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দেয়ার দাবি ইসরাইলের। এমনকি তাদের নেতৃত্বশূন্য করে দিয়েছে বলেও জানায় তেল আবিব। যদিও হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখনও তাদের প্রায় ১ লাখের ওপর সেনা সদস্য রয়েছে।





