গাজার হামাস বিরোধীদের সহায়তা দেয়ার কথা স্বীকার করেছে ইসরাইল

যুদ্ধ বিরতির প্রথম ধাপে সম্মত হামাস ও ইসরাইল
যুদ্ধ বিরতির প্রথম ধাপে সম্মত হামাস ও ইসরাইল | ছবি: সংগৃহীত
0

লাখো ফিলিস্তিনিকে অভুক্ত রাখা ইসরাইলই খাবার, অর্থ, অস্ত্র তুলে দিচ্ছে একদল ফিলিস্তিনির মুখে-হাতে। কারা তারা? গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, যাদের অবস্থান হামাসের বিরুদ্ধে। অস্ত্র আর ত্রাণ চুরির অভিযোগ থাকলেও কেবল হামাসবিরোধী বলে তাদের সমর্থন দেয়ার কথা স্বীকার করছেন খোদ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।

গাজায় ইসরাইলি সেনারা নেই। কিন্তু তাদের ছেড়ে যাওয়া অবস্থানের আশপাশ থেকে সহায়তা যাচ্ছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে। প্রমাণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমনই অসংখ্য ভিডিও।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের বিশ্লেষণে জানা যায়, ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর খালি করে যাওয়া চৌকি থেকে ৪শ' মিটারের মধ্যে অবস্থান এই এলাকার। যেখান থেকে পানি, খাবার আর জ্বালানির মজুত নিয়ে পিক-আপ ট্রাকের বহর বেরোচ্ছে। আশরাফ আল মানসির নেতৃত্বে গাজার স্থানীয় একদল মিলিশিয়া নিয়ে যাচ্ছে এসব পণ্য। হামাসবিরোধী সক্রিয় চার মিলিশিয়া বাহিনীর একটি এই আল-মানসি গোষ্ঠী। চারটি গোষ্ঠীই ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত এবং গাজার ভেতরে তৎপর।

এর আগে প্রকাশিত দু'টি ভিডিওতেও এই একই পথে ট্রাকের বহর শনাক্ত হয়েছে। দু'টি ভিডিওতেই দেখা যায় ইসরাইল দখলকৃত এলাকার ভেতর থেকে ট্রাক বের হতে। একটি ভিডিও ক্লিপে ট্রাকে অন্যান্য পণ্যের সাথে ইসরাইলি জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসওএস এনার্জির নাম লেখা জেরিক্যান দেখা গেছে।

পণ্য বোঝাইয়ের সঠিক সময় ভিডিও থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে এগুলি ইসরাইলি অবকাঠামোর এত কাছে এ ঘটনা বলেই অনিবার্য হয়ে উঠেছে তদন্ত। কারণ ঘটনা এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর আগে গাজার দক্ষিণে একই ধরনের কিছু গোষ্ঠী ইসরাইলের দেয়া অস্ত্র, তহবিল আর অন্যান্য সহায়তা নিচ্ছে বলে খবর ছড়িয়েছিল। নতুন ভিডিওতে প্রমাণিত যে গাজার উত্তরেও একই ধরনের ব্যবস্থা দাঁড় করানো হচ্ছে।

অস্ত্রবিরতি কার্যকরের পর গেলো সপ্তাহে গাজার শাসকদল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এমনই একটি গোষ্ঠীর ৩২ সদস্যকে হত্যা করে। নিরাপত্তা অভিযানের নামে আটক করে কয়েকশ' সশস্ত্র ফিলিস্তিনিকে। তারও আগে খবর ভেসে বেড়াচ্ছিল যে হামাসকে দুর্বল করতে গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ব্যবহার করছে ইসরাইল; লক্ষ্য ফিলিস্তিনি উপত্যকায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করা।

আরও পড়ুন:

ত্রাণ লুটে জড়িত আবু শাবাব? ইসরাইলের সহযোগী হিসেবে আগেই ইয়াসির আবু শাবাব নামের এক চক্রের নেতা ও তার সমর্থকদের চিহ্নিত করে হামাস। গেলো মে মাসের শুরুর দিকে প্রকাশ্যে আসে আবু শাবাব গোষ্ঠীটি। জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন ত্রাণ বণ্টনকারী নেটওয়ার্ককে গাজা থেকে উৎখাত করে যখন ইসরাইল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ খাবার সরবরাহের দায়িত্ব নেয়, তখন এসব খাবার ও ত্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করে আবু শাবাব গোষ্ঠী। মার্চ থেকে গাজায় খাবারসহ সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল ইসরাইল।

বিভিন্ন সময় ত্রাণ কর্মীদের দেয়া তথ্যের বরাতে টার্কিশ সংবাদমাধ্যম টিআরটি জানায়, ত্রাণের সুরক্ষা নয়, বরং ত্রাণ লুট করে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের আরও বেশি করে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল আল শাবাব বাহিনী। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ ধরনের ঘটনা এখনও ঘটে চলেছে অবরুদ্ধ উপত্যকায়। উল্টো ত্রাণবাহী ট্রাকের পথ আটকে সহিংস লুটপাট চালানো ব্যক্তিদের এখন সুরক্ষা দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। বিনিময়ে, ইসরাইলের নতুন সামরিক ঘাঁটি থেকে সরবরাহকৃত পণ্যের সুরক্ষা দিচ্ছে ফিলিস্তিনি এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী।

কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবর, স্ট্রাইক ফোর্স অ্যাগেইনস্ট টেরর নামের আরেকটি সশস্ত্র চক্রকেও মদদ দিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। চক্রটির নেতা হুসাম আল-আস্তালের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় গাজার প্রভাবশালী আল-মাজিদা গোত্রের সাথে। ইসরাইলি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অস্ত্র বিরতি কার্যকরের ক'দিন আগেই অক্টোবর মাসের শুরুতে হামাস যোদ্ধাদের সাথে সংঘাতে জড়ায় চক্রটি।

লাখো ফিলিস্তিনিকে অভুক্ত রাখা ইসরাইলই খাবার, অর্থ, অস্ত্র তুলে দিচ্ছে বিভিন্ন সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর হাতে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান বলছে, হামাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। অস্ত্র আর ত্রাণ চুরির অভিযোগ থাকলেও কেবল হামাস বিরোধী বলে মিলছে এই সমর্থন।

ইএ