ট্রাম্পের এক ফোনকলে বন্ধ হতে পারে ইরান-ইসরাইল সংঘাত: মাজিদ ফারাহানি

নিরাপত্তার আশায় ইরান ছাড়ছেন অনেক ইরানি বাসিন্দা
নিরাপত্তার আশায় ইরান ছাড়ছেন অনেক ইরানি বাসিন্দা | ছবি: সংগৃহীত
0

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ফোনকলেই বন্ধ হতে পারে চলমান ইরান-ইসরাইল সংঘাত। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা মাজিদ ফারাহানি। এসময় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে জড়ালে তেহরানের হাতেও অনেক বিকল্প আছে।’ আর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে ইরান পিছু হটবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গত ১৩ জুন শুরু হওয়া ইরান-ইসরাইল সংঘাত দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ালেও তা বন্ধের কোনো ইঙ্গিত নেই। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দৌড়ঝাঁপ করলেও আদতে কোনো ফল আসছে না। যতদিন যাচ্ছে পাল্টাপাল্টি হামলা তত তীব্র হচ্ছে। দুই পক্ষের কেউই কোনো ধরনের সমঝোতায় আসতে রাজি নয়।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে হুমকি আখ্যা দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে হামলা চালায় ইসরাইল। জবাবে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরানও। ইসরাইল হামলা বন্ধ না করলে পারস্পরিক সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

এ অবস্থায় ইরানি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের কর্মকর্তা মাজিদ ফারাহানি দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ফোনকলেই এই সংঘাত বন্ধ হতে পারে। সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ট্রাম্প ইসরাইলকে হামলা বন্ধের নির্দেশ দিলেই কূটনৈতিক আলোচনার পথ সহজ হবে।

তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব সহজেই এই সংঘাত থামাতে পারেন। ইসরাইলকে তার একটি ফোনকলেই এটি সম্ভব। কিন্তু তিনি কেন এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা বুঝতে পারছি না। ট্রাম্প যদি নেতানিয়াহুকে সংঘাত বন্ধের নির্দেশ দেন, তাহলেই আলোচনার সব পথ খুলে যাবে।’

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ফারাহানি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেকোনো আলোচনায় এখনো আগ্রহী ইরান। এর আগে ইসরাইলের হামলা বন্ধ করতে হবে। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধের প্রস্তাব মেনে নেবে না ইরান। এ বিষয়ে কিছুটা ছাড় দেয়ার আভাসও দিয়েছেন তেহরানের এই সরকারি কর্মকর্তা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিষয়টি সংঘাতকে আরও উস্কে দিতে পারে। সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না ইরান। তেহরানের অনেক বিকল্প খোলা আছে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ফারাহানি।

মাজিদ ফারাহানি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে জড়িত হলে ইরান তার বিকল্প পথ বেছে নেবে। তেহরান হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। আমাদের হাতে অনেক অপশন আছে। যার সবগুলোই বিবেচনাধীন। প্রত্যেকটি বিকল্প পথগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

ভয়াবহ এই সংকটের মুখে নিরাপত্তার আশায় ইরান ছাড়ছেন অনেক বাসিন্দা। সংঘাত শুরুর পর ইরানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্মেনিয়ার সীমান্ত হয়ে উঠেছে একমাত্র নির্ভরযোগ্য রুট। যদিও এই পাহাড়ি অঞ্চলে চলাচলে ট্যাক্সি চালকরাও তাদের ভাড়া বাড়িয়েছে ৩ গুণ।

স্থানীয় একজন জানান, ইরানে আমার অসুস্থ বাবাকে দেখতে এসেছিলাম। সঙ্গে ছোট বাচ্চা নিয়ে খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের ইরান ছাড়তে হচ্ছে।

অন্য একজন বাসিন্দা জানান, এই মুহূর্তে আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের কথা ভাবছি। সংঘাতে কার জয় হলো তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমরা শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই।

অপর একজন ইরানি নাগরিক জানান, আমরা প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণের শব্দ শুনছি। যারা সুযোগ পাচ্ছে তারা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। শহর ছেড়ে অনেকে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় শক্তিগুলোও ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সাফ কথা ইরানকে শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পথ বেছে নিতে হবে। যদিও ইরানের অবস্থান এর বিপরীতে। তেহরানের দাবি, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

ইএ