পাঁচ বছর আগে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর ব্রিটিশরা গণভোটকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে গত জানুয়ারি থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রেক্সিটের পর প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হয়েছে যুক্তরাজ্য ও ইইউ।
সোমবার (১৯ মে) ৯ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় সম্মেলন। যেখান থেকে ঘোষণা আসে শিগগিরই গঠন করা হচ্ছে ইউকে- ইইউ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশীদ্বারিত্ব। যেখান থেকে ১৭ হাজার কোটি ডলার ঋণ পাবে যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তিকে উভয় পক্ষের জন্য বিজয় হিসেবে দেখছেন, আর ইইউ কমিশন প্রধান এটিকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে দাবি করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন বলেন, ‘আমরা পাতা পরিবর্তন করেছি। অনন্য সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করছি। ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বমঞ্চে দুই মিত্র পাশাপাশি অবস্থান করেছে। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পাশাপাশি একই উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধ বহন করেছে। যা সামনেও অব্যাহত থাকবে।’
বাণিজ্য চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ১২ বছর মাছ ধরার অনুমতি পাচ্ছে ইইউর রাষ্ট্রসমূহ। বিপরীতে ইইউর দেশগুলোয় যুক্তরাজ্যের খাদ্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কমানো হবে বিধিনিষেধ। এছাড়াও ব্রিটিশ নাগরিকরা বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ই-গেট ব্যবহারের মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পারবেন ইউরোপ। সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের কারণে ২০৪০ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে যুক্ত হবে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যে সম্মেলন হলো। আমাদের সম্পর্কও নতুন যুগে প্রবেশ করলো। পাশাপাশি চুক্তিটি উভয়পক্ষের জন্যই বিজয় এনে দিয়েছে। গত বছর ব্রিটিশরা যে উদ্দেশ্যে ভোটে আমাকে নির্বাচিত করেছেন, তা পূরণ হলো।’
সম্পর্ক পুনঃস্থাপনকে ব্রিটিশরা স্বাগত জানালেও এর বিরোধিতা করেছে বিরোধী দল। কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের দাবি, চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছে স্টারমার প্রশাসন। জনগণ ভোটের মাধ্যমে এই সরকার নির্বাচিত করেছে। তাই সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার অর্থ জনগণের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বেইডনক বলেন, ‘কিয়ার স্টারমার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, এটি দেখে আমি হতবাক হয়ে পড়েছি। আমাদের মৎস্য সম্পদ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ভালো চুক্তির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা সবচেয়ে খারাপটিই বেছে নিয়েছি। ৩ বছরের ধারণা করছিলাম। অথচ ১২ বছরের চুক্তি করা হলো।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কিত কিয়ার স্টারমার। তাই বিচ্ছেদ ভুলে ইইউতে যুক্তরাজ্য একীভূত হলেও আশ্চর্য হবেন না অনেকে।