ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী বললেন খামেনি

আলী খামেনী, ডোনাল্ড ট্রাম্প
আলী খামেনী, ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

ট্রাম্পকে মিথ্যাবাদী বললেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তার অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বললেও, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এদিকে ইরানি প্রেসিডেন্ট বলছেন, পরমাণু ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারবার হুমকি দিচ্ছেন। অন্যদিকে তেহরানের নেতৃত্বকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।

মধ্যপ্রাচ্যে চার দিনের সফর শেষে হোয়াইট হাউসে ফিরে ট্রাম্প বলেন, গাজা যুদ্ধ ও ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তিনি ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিয়েছেন। যা এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। যদিও ট্রাম্পের সফর প্রায় পুরোটাই ছিল অর্থনীতি ও বাণিজ্য সংক্রান্ত। কারণ, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তিন দেশের সঙ্গেই ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরব নেতাদের বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যখন উন্নয়ন করছে ইরান তখন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ইরানের সবুজ কৃষিজমি পরিণত হয়েছে শুষ্ক মরুভূমিতে। এখন তারা প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎও পাচ্ছে না। যদিও, তেহরান জানিয়েছে, বছরের পর বছর ধরে জ্বালানি সংকটে দেশটিতে বিদ্যুতের ঘাটতি বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।

এখানেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের জন্যও ইরানকে দোষারোপ করেছেন তিনি। জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ট্রাম্পের এমন মন্তব্যকে প্রতারণা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক হুমকি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। এছাড়া, সম্প্রতি ট্রাম্প পারস্য উপসাগরকে আরব উপসাগর বলে সম্বোধন করায় এর কড়া সমালোচনা করেন ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাসহ দেশটির সাধারণ মানুষ।

এরমধ্যেই, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ট্রাম্পের মিথ্যাচারের জবাব দেয়ার রুচি তার নেই। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে ইসরাইলকে ক্রমাগত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যা মার্কিন জাতির জন্য লজ্জার।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। যা চরম মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ইহুদিদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলিরা ট্রাম্পের ক্ষমতা ব্যবহার করে গাজার শিশুদের মাথায় বোমা ফেলছে, হাসপাতাল ও বসতবাড়ি গুড়িয়ে দিচ্ছে। লেবানন ও ইয়েমেনেও একই অবস্থা।’

এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ট্রাম্প একদিকে শান্তির বার্তা দিচ্ছেন, অন্যদিকে ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছেন। নৌ বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে পেজেশকিয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে ইরান ভীত নয়, তবে যুদ্ধে জড়াতেও রাজি না তেহরান।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে এসে যা করেছেন এবং যা বলছেন তা তিনি ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না। তিনি ইরানকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে তিনি শান্তির কথা বলছেন, অন্যদিকে গণহত্যা চালানোর জন্য উন্নত হাতিয়ার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির বার্তা নয় হত্যার বার্তা দিচ্ছেন।’

এদিকে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবারও সাফ জানিয়েছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না তেহরান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটনসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করা ইরানের জনগণকে দেখেছি। তারা অসাধারণ মানুষ। আমি চাই না তাদের প্রতি হিংসাত্মক বা সংঘাতমূলক কিছু হোক। তবে ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না।’

এ নিয়ে চার দফা আলোচনা করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি তেহরান ও ওয়াশিংটন। বিষয়টি অস্থির করে তুলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এরইমধ্যে তিনি হুমকিও দিয়েছেন, শিগগিরই কোনো চুক্তিতে না আসলে ইরানকে খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সেজু