অস্ত্রবিরতি চললেও তা টিকবে কতক্ষণ, সে ভরসা নেই। চলমান বাগযুদ্ধ কখন আবার সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়, সে শঙ্কায় তটস্থ কাশ্মীরের মানুষ। তাই সীমান্তের দু'পাশেই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিরাপদ থাকার উপায় খুঁজছেন বাসিন্দারা। অনেকে নিজ উদ্যোগেই মাটি খুঁড়ে বাঙ্কার তৈরি করছেন গোলাবর্ষণ থেকে বাঁচার প্রস্তুতি হিসেবে।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘মাটি খুঁড়ে পরিখার মতো বাঙ্কার নির্মাণ করছি আমরা। সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা হিসেবে। আপাতত এটা ঠিক আছে, কিন্তু তাও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। কারণ বোমা এই পরিখার উপর এসে পড়লে মাটি ধসে যেতে পারে।’
আরেকজন বলেন, ‘আগেই অনেক ক্ষয়ক্ষতির শিকার আমরা। এই বাঙ্কারগুলো খুব জরুরি। এতোটাই দরকার যে এখানে অনেক অনেক বাঙ্কার দরকার।’
যুদ্ধের শঙ্কা যে অমূলক নয় তা শুক্রবার ফের প্রমাণ করলো ভারত ও পাকিস্তানের সরকার। অস্ত্রের যুদ্ধে বিরতি থাকলেও বিরামহীন চলছে বাগযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক অভিযান 'অপারেশন সিন্দুর' এখনও চলমান বলে দাবি দিল্লির। অন্যদিকে ক্রমশ পরিস্থিতি অশান্ত করে তোলার জন্য প্রতিবেশীকে দায়ী করে ইসলামাবাদ।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, 'অপারেশন সিন্দুর এখনও শেষ হয়নি। এটা তো স্রেফ একটা ঝলক ছিল। সঠিক সময় যখন আসবে, পূর্ণ চলচ্চিত্র দেখাবো আমরা সারা বিশ্বকে।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলি খান বলেন, ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় যখন বিশ্ব সম্প্রদায় সক্রিয়ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারত ক্রমাগত বাস্তবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাচ্ছে, আগ্রাসনের সাফাই গাইছে এবং পাকিস্তানের পারমাণবিক সমৃদ্ধির দিকে অযৌক্তিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে।’
পাকিস্তানকে দুষেই ক্ষান্ত হচ্ছে না ভারত সরকার। সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার জন্য দায়ী করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোকেও। ভারতের বৈরি আচরণে চুপ করে থাকবে না বলে জানায় পাকিস্তানও।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্র তহবিল যে ১০০ কোটি ডলার ধার দিয়েছে পাকিস্তানকে, আমি বিশ্বাস করি যে এর বড় একটা অংশ খরচ করা হবে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর পৃষ্ঠপোষকতায়। তাহলে কি এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পরোক্ষভাবে হলেও সন্ত্রাসবাদে তহবিল যোগাচ্ছে না? সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এটা আমার প্রশ্ন। আমি মনে করি, পাকিস্তানকে যেকোনো আর্থিক সহযোগিতা দেয়া মানেই সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষকতার চেয়ে কম নয়।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলি খান বলেন, ‘ভারতের যুদ্ধংদেহি মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা এটা নিশ্চিত করে যে ভারত নিজেদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে এবং আরও আগ্রাসন থেকে বিরত থাকবে। ভারত আবারও লড়াই শুরু করলে পাকিস্তানেরও জবাব দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
এদিকে, বাণিজ্যিক সম্পর্ককে হাতিয়ার করে দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরি পরাশক্তিকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন বলে দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যত না আমাকে সারা জীবনেও কৃতিত্ব দেয়া হবে, তার চেয়েও এটা বড় সাফল্য আমার। তারা বড় পরাশক্তিধর দেশ। পারমাণবিক শক্তির প্রশ্নে এটা খুব নোংরা একটা শব্দ। কারণ এর মাধ্যমে জঘন্যতম ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। আমার মনে হয় যে তারা এর খুব কাছে এসে পড়েছিল। তীব্র বিদ্বেষ ছিল। তখনই আমি বললাম যে আমি বাণিজ্য নিয়ে কথা বলতে চাই।’
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটককে নিহতের ঘটনায় সীমান্তে দুই সপ্তাহ গোলাগুলির পর, গেলো ৭ মে সরাসরি যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। এরপর ১০ মে আসে সাময়িক অস্ত্রবিরতির ঘোষণা। প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী চারদিনের সহিংসতায় মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় দুই দেশ, প্রাণ যায় অর্ধশতাধিক মানুষের।