সোমবার (১২ মে) স্থানীয় সময় বিকেলে গাজা উপত্যকায় কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল ইসরাইলের গোলাবর্ষণ। ৫৮৪ দিন পর হামাস এক জিম্মিকে মুক্তি দেয়ায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি করা হয় সেইফ প্যাসেজ। যদিও কিছুক্ষণ বাদেই পরিস্থিতি ফিরেছে আগের অবস্থায়।
সোমবার ইসরাইলি হামলায় উপত্যকায় হতাহত অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি। স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক কিংবা সাধারণ মানুষ, বাদ যাননি কেউ। বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে খান ইউনিসের আল নাসের হাসপাতাল। তাই চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে।
প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা সীমান্ত অবরোধে গাজায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়। চরম খাদ্য সংকটের সম্মুখীন উপত্যকার ৯৩ শতাংশ বাসিন্দা। যার মধ্যে ১২ শতাংশ বা প্রায় আড়াই লাখ ফিলিস্তিনির কপালে এক বেলা খাবারও জুটছে না। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।
এফএও ডেপুটি ডিরেক্টর বেথ বেকডল বলেন, ‘খাদ্য সংকটের শীর্ষ স্তর আইপিসি ফাইভ। এর আগে আমরা দেখেছি এই স্তরে ২ লাখ ৪৪ হাজার ফিলিস্তিনি ছিলেন। আমাদের ধারণা, এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বা ৪ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছাতে পারে।’
এর আগে মার্কিন-ইসরাইলি দ্বৈত নাগরিক এডান আলেক্সান্ডারকে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির দাবি, মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে মুক্তি দেয়া হয়েছে তাকে। এসময় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় জোর দেয়া হয়। ট্রাম্প জানান, শিগগিরই মুক্তি পাবেন বাকি জিম্মিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আশা করছি, শিগগিরই বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন। অনেকের সন্তান জিম্মি দশায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা মরদেহ ফেরত চাচ্ছেন। তাই জীবিতদের পাশাপাশি মৃতদের মরদেহ ফিরিয়ে আনাও জরুরি।’
জিম্মি মুক্তিতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী জানান, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার উদ্দেশে দোহায় অবস্থান করছে প্রতিনিধিদল।
তবে এ নিয়ে কট্টর ইহুদি দলগুলোর তোপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। কিছুক্ষণ বাদে বৈঠকে জোট সরকারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী জানান, হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে ইসরাইল। পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রীর দাবি, ধ্বংসাত্মক হামলার মাধ্যমে উপত্যকা দখল করা প্রয়োজন।
ইসরাইলের পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির বলেন, ‘হামাসের পূর্ণ পরাজয় আমাদের অভিযানের প্রধান লক্ষ্য। জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনার একমাত্র পন্থা এটি। আমাদের উচিত গাজায় ধ্বংসাত্মক হামলা চালানো। পাশাপাশি উপত্যকা দখল করে গাজাবাসীকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেয়া।’
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এডান আলেক্সান্ডারকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে ট্রাম্প নির্দেশিত কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে। ট্রাম্প আমাকে জানিয়েছেন, তিনি ইসরাইলের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করছি, আমরা যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণে সমর্থ হবো।’
এদিকে জার্মানির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বার্লিন সফরে রয়েছেন ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট। এসময় জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরের সঙ্গে সাক্ষাতে গাজা অভিযানের পক্ষে সমর্থন চান তিনি।