সৌদি আরব যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

বিদেশে এখন
0

যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় সৌদি আরব যাবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আগামী মাসেই রিয়াদ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, এতে ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি ট্রাম্প। এছাড়াও, ন্যাটো সদস্য দেশগুলো প্রতিরক্ষাখাতে বিনিয়োগ না করলে যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে আর সুরক্ষা দেবেনা বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমন অবস্থায় রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ক্ষমতায় এসেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও শান্তিচুক্তির চেষ্টার প্রক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এখন পর্যন্ত করা সব ধরনের আলোচনা আর বৈঠকে স্পষ্টতই উঠে এসেছে রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি। ইউক্রেনের চরম সংকটময় মুহূর্তে এবার ট্রাম্প বললেন, যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে আশ্রয় নেয়া ২ লাখ ৪০ হাজার ইউক্রেনীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

এদিকে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগামী সপ্তাহে সৌদি আরব যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী মাসে সৌদি আরব সফর করবেন তিনি। এতে, দেশটির সঙ্গে ১ লাখ কোটি ডলারের বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করবেন বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চেষ্টা থাকবে, যেন ৪ বছরে মার্কিন কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে সৌদি আরব। যদিও, এসময় ইউক্রেন ইস্যুতে কোন কথাই বলেননি তিনি।

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি আলোচনা উহ্য রেখে ওভাল অফিসে দেয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ন্যাটো সদস্য দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ না বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষা করতে যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র বিপদে পড়লে ইউরোপের কোন দেশ সহযোগিতা করতে আসবে কিনা, এই বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রতিরোধ করবো না। ন্যাটোতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়। ন্যাটো আজকের অবস্থানে আসতো না যদি আমি সমর্থন না করতাম। যখন ন্যাটোতে প্রথম আসি, তখনই দেখেছি, সবাই বিল পরিশোধ করে না। আপনারা বিল না দিলে আমাদের পাবেন না। আপনাদের আরো অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আমি আসার আগে আমরা শতভাগ অর্থ দিয়েছি ন্যাটোতে। এখন তারা আমাদের ব্যবসার ১২ টা বাজাচ্ছে।’

এমন অবস্থায় ইউক্রেনের সাবেক সেনাপ্রধান ভালেরি জালুঝ-নি করেছেন আরেক বিস্ফোরক মন্তব্য। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া ন্যাটো ভবিষ্যতে আর থাকবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের আশা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে একমত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। ইউরোপের বৃহত্তম অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ। সেইসঙ্গে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা আরও বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটও বলেছেন, প্রতিরক্ষা খাতে ইউরোপকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এমন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন রাশিয়া ন্যাটো সদস্য কোন দেশেই হামলা করার সাহস না পায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতি আলোচনা আর ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে আশাবাদী মার্ক রুট।

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেনের আলোচনা ফলপ্রসূ হোক এই আশা করি। ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে চিন্তিত। পরিষ্কার করে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্র আর ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ইউরোপকে অবশ্যই প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’

এদিকে, ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জরুরি সম্মেলন, কিয়েভকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও ইউরোপের দেশগুলোর সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলছেন, ইউক্রেনে শান্তিচুক্তি হলেও রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আমাদের শান্তি নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে হবে। অন্যদের কোনোকিছু নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না, কিন্তু যা কিছু নিজেদের তা ছেড়ে দেবো না। দেশে স্থিতিশীল উন্নয়ন, শান্তি আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

এদিকে, রাশিয়াকে সতর্ক করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, মস্কোকে প্রতিরোধ করা না গেলে আরও অন্য দেশেও হামলা হতে পারে। রাশিয়াকে প্রতিহত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একযোগে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বহির্ভূত ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সমরাস্ত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা তুরস্ক বলছে, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাশে আছে আঙ্কারা। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী পাঠাতেও প্রস্তুত তুরস্ক।

ইএ