বিরল খনিজ চুক্তি করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে রীতিমতো অপমানিত হয়ে হোয়াইট হাউজ ছাড়েন ভলোদিমির জেলেনস্কি। একরাশ হতাশা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চলে যান ব্রিটেনে, যদি সেখানে মেলে কোন আশার আলো। নিরাশ হতে হয়নি জেলেনস্কিকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া প্রীতির কারণে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য ইউরোপীয় নেতাদের নিয়ে জরুরি সম্মেলনের ডাক দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। বলেন, ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। ট্রাম্প আগেও বলেছেন আমাদের সঙ্গে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আসলে নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়। ভ্লাদিমির পুতিনকে বিশ্বাস করি না। তাই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছি। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বাস করি, তার এখন পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এতো মাস, বছর পর আলাদা হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়।’
চার দফার এই প্রস্তাবনায় বলা হয়, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে হবে। যেকোনো শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকেই গুরুত্ব দিতে হবে, কিয়েভের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো সেনা অভিযান ঠেকানোর মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জোট গঠন করে চুক্তিতে আসতে হবে।
১৮ দেশের নেতাদের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনের পর জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, কিয়েভের সেনাবাহিনী যেন শক্তিশালী হয়, সেই নিশ্চয়তা ইইউ'কে দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাশাপাশি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী শক্তিশালী করার কাজও চালিয়ে যেতে হবে। ইউরোপের সীমান্তে কোনো পরিবর্তন চায় না ইইউ। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জানান, শুধু ইউক্রেন নয়, সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে পুরো ইউরোপের। সুর মেলান ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য সদস্য দেশগুলোর নেতারাও।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরজুলা ফন ডার লাইয়েন বলেন, ‘শুধু ইউক্রেনের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা নয়, ইউরোপে সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আগামী ৬ মার্চ এই বিষয়ে একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করবো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর জন্য বড় পরিকল্পনা। প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।’
এই ইস্যুতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি বলেন, ন্যাটোর মধ্যে বিভক্তি নয়, একতা অনেক জরুরি। একই ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশে আছে কানাডা। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আরও বলেন, প্রয়োজনে ইউক্রেনে সেনা পাঠাবেন তিনি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘ইউক্রেন শুধু নিজ ভূখণ্ড রক্ষা করছে না, গণতন্ত্র রক্ষা করছে। কানাডার সেনাবাহিনীর সাহায্য করার সক্ষমতা আছে। যেকোনো সাহায্য করতে কানাডা প্রস্তুত। জেলেনস্কিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, দেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করছেন তিনি। আমিও ইউক্রেনের পাশে আছি।’
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন,‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চান তিনি। বিরল খনিজ নিয়ে চুক্তি করতেও আগ্রহী জেলেনস্কি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া পুতিনকে ঠেকানো সম্ভব না। কিন্তু অবশ্যই গঠনমূলক আলোচনা হতে হবে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘কথা বলতে চাই না কি হয়ে গেছে। আমি সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী। বিশ্বাস করি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। গঠনমূলক আলোচনা জরুরি। সেজন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। এমন একটি দেশের দায়িত্বে আছি, যেই দেশ নিরাপত্তার জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল।’
এদিকে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ শেষ করতে চায়। কিন্তু দুইপক্ষ সম্মতি না জানালে এই যুদ্ধের ইতি টানা সম্ভব না। অন্যদিকে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প সঠিক পথে এগিয়ে গেলেও ইউরোপের নেতাদের লক্ষ্য ভিন্ন। তারা চাইছে, এই যুদ্ধ আরও টিকিয়ে রাখতে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘ট্রাম্পের বুদ্ধি আছে। তার সঙ্গে কাজ করে ভালো লাগে। ট্রাম্প জোর গলায় বলেছেন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান তিনি। তাহলে যুদ্ধ কে টিকিয়ে রাখতে চাইছে? অবশ্যই ইউরোপ। ইউরোপ প্রশিক্ষণ দিয়ে সেনা পাঠিয়ে বলবে শান্তি চুক্তি চাই, এটা তো সংঘাত বাড়াবে। ইউক্রেন কোথাও যাচ্ছে না, এখানেই থাকছে।'’
নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি ইউরোর সামরিক সহায়তা চুক্তির ঘোষণা দেন কিয়ার স্টারমার। যেখানে রয়েছে ৫ হাজারের বেশি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। সম্মেলন শেষে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।