তিন বছরব্যাপী যুদ্ধে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে বসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। সৌদি আরবের রিয়াদে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে দীর্ঘ ও কঠিন যাত্রার প্রথম ধাপ হিসেবে বৈঠকটিকে তুলনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যদিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য পুনরায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগের পাশাপাশি শীঘ্রই উচ্চপর্যায়ের দল গঠন করবে দুই দেশ। পাশাপাশি পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে মিলছে যৌথ সম্মতি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, 'ইউক্রেন ইস্যুতে আমরা পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছেছি। সংঘাত নিরসনে সংলাপকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুইপক্ষই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি নিয়োগে সম্মত হয়েছে। এতে করে নিয়মিত ভিত্তিতে সংঘাত নিরসনের বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, 'যুদ্ধের দীর্ঘ ও কঠিন যাত্রা শেষ করার জন্য এটি প্রথম কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সংঘাত নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নির্বাচনী সভাতেও বারবার তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই তিন বছর বাদে আবারো সংঘাত শুরুর শঙ্কা রেখে তিনি যুদ্ধ বিরতির দিকে এগোতে চান না।'
শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠকে ঘুরে ফিরে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর প্রসঙ্গ। রাশিয়ার পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে সার্বভৌমত্বের অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই পারে ইউক্রেন। তবে সামরিক জোট ন্যাটোতে কিয়েভের অন্তর্ভুক্তি মস্কোর নিরাপত্তায় সরাসরি হুমকি তৈরি করবে। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনার একপর্যায়ে ইইউকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মার্কো রুবিও বলেন, 'ভিন্ন পক্ষ আছে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইইউ ও রাশিয়া একে অপরের ওপর পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। হয়তো কোনো একপর্যায়ে আলোচনার টেবিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও অংশ নিবে।'
সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অসংখ্যবার বলেছেন, ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হুমকি তৈরি করবে। এর কারণেই আমরা প্রায় ৩ বছর যাবৎ যুদ্ধ করছি। আশা করছি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কোনো বিষয় বাস্তবায়ন হতে দিবেন না।'
বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি না থাকার প্রশ্ন এড়িয়ে যান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অপরদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কাউকেই বঞ্চিত করা হয়নি। ক্রেমলিন জানিয়েছে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন অনুসারে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, 'প্রেসিডেন্ট নিজে জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি প্রস্তুত। তবে জেলেনস্কির আলোচনায় বসার বৈধতা রয়েছে কী না, এটিও চিন্তার বিষয়। ২০২৪ সালের মে মাসে তার মেয়াদ শেষ হয়।'
এদিকে পোল্যান্ড সফরে রয়েছেন ইউক্রেন বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত কেইথ কেলোগ। মঙ্গলবার পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে দুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ইউক্রেন সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে চীন।