আফগানিস্তানের খনিগুলো কাজে লাগানোর জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তালেবান

বিদেশে এখন
0

খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ আফগানিস্তানের খনিগুলো কাজে লাগানোর জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অর্থসংকটে জর্জরিত তালেবান শাসকগোষ্ঠী। কয়েকশ' কোটি ডলারের প্রায় ২শ' চুক্তি হলেও নেই সেসব কার্যকরের মতো দক্ষ জনবল, অবকাঠামো ও বিশেষজ্ঞ। এ শূন্যস্থান পূরণের সুযোগ লুফে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা আধিপত্যবিরোধী দেশগুলো।

সবুজ পান্না, রক্তলাল চুনী ও মার্বেলের মতো মূল্যবান রত্মপাথর ছাড়াও স্বর্ণ আর লিথিয়ামের বিশাল মজুত লুকিয়ে আছে আফগানিস্তানের পাথুরে পাহাড়ি ভূগর্ভে; যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের ২০১০ ও ২০১৩ সালের বিশ্লেষণ অনুযায়ী যার তৎকালীন বাজারমূল্যে এক লাখ কোটি ডলার; বর্তমানে যা কয়েক গুণ বেশি।

কয়েক দশকের যুদ্ধের জেরে আফগানিস্তানের এসব সম্পদ অব্যবহৃতই থেকে গেছে এতকাল। তবে এ পর্যায়ে খনিজ সম্পদকে পুঁজি করে আফগান অর্থনীতি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে তালেবান শাসকগোষ্ঠী। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এসব সম্পদের ওপর এখন পর্যন্ত প্রায় ২শ' চুক্তি হয়েছে, যার বেশিরভাগই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কিন্তু কয়েকশ' কোটি ডলারের এসব চুক্তি বাস্তবায়নে আফগানিস্তানে নেই প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ, অবকাঠামো কিংবা দক্ষ জনবল। এ অবস্থায় খননশিল্পে অভিজ্ঞ ও বিনিয়োগে আগ্রহী যেকোনো পক্ষের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী তালেবান সরকার। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বারে দ্বারেও ধরনা দিচ্ছে তালেবান কর্মকর্তারা।

বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য, খনি গবেষণা ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনে নিয়মিত দরপত্র প্রকাশ করছে আফগান খনি মন্ত্রণালয়। এসব দরপত্র বিভিন্ন দূতাবাসে পাঠিয়ে খনন প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে কাবুল। লক্ষ্য আফগানিস্তানের ভূগর্ভস্থ সম্পদ কাজে লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব প্রবাহ নিশ্চিত করা।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ফল এরই মধ্যে দৃশ্যমান। এরই মধ্যে খনন প্রকল্প প্রায় সাত শতাংশ বেড়েছে, যার প্রভাবে ২০২৩-২৪ সালে আফগান শিল্প খাত সম্প্রসারিত হয়েছে আড়াই শতাংশের বেশি। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য, ২০২১ ও ২০২২ সালে কয়লা, ট্যাল্ক আর ক্রোমাইট উত্তোলন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে আফগানিস্তানে।

ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে বাজার হারাতে পারে, তাৎক্ষণিকভাবে এমন খনিজ সম্পদগুলোকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে তালেবান। বিপরীতে বিশ্ববাজারে ক্রমশ দাম বাড়ছে, এমন খনিজ যেমন লিথিয়ামের মতো সম্পদ আপাতত হাতেই রাখছে গোষ্ঠীটি।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারল্য সংকট থেকে নিস্তার পেতে আফগান সরকার অসংখ্য ছোট ছোট খনন প্রকল্পের উদ্যোগ নিলেও সে হারে কাজ শুরু করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্য সক্ষমতার ১০ গুণ বেশি দরপত্র ছেড়েছে তালেবান শাসকগোষ্ঠী। এর যতোটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, তার বেশিরভাগই ঘটছে চীনের হাত ধরে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সরকারকে উৎখাত করে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর দেশটিকে বর্জন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ। এ সুযোগটিই লুফে নিচ্ছে মার্কিন ও পশ্চিমা আধিপত্যবিরোধী চীন, ইরান, তুরস্ক, উজবেকিস্তান আর কাতারের মতো দেশগুলো, যারা শুরু থেকেই কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক রক্ষা করছে কাবুলের নতুন প্রশাসনের সাথে। বলা হচ্ছে, এর ফলে গেল সাড়ে তিন বছরে এ খাতে দেড় লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে আফগান জনতার জন্য। আর এই পুরো কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন।

রাজধানী কাবুল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তামার খনিতে কাজ করছে চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এমসিসি। তালেবান কর্তৃপক্ষের নবায়নকৃত ২০০৮ সালের একটি চুক্তির অধীনে চলছে এ কাজ। জানা যায়, কাবুলের সাথে অন্তত তিনটি খনি প্রকল্প চুক্তি নিশ্চিত করেছে বেইজিং; যার আওতায় উত্তোলিত স্বর্ণ, তামা ও জেড রত্নপাথরের প্রায় পুরোটাই যায় চীনে।

খনিকেন্দ্রিক চুক্তির আওতায় যেসব প্রকল্প এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আফগানিস্তানে, সেগুলোর বেশিরভাগ খনি গবেষণাতেই সীমাবদ্ধ, যা সময়সাপেক্ষ এমনকি ফলও আশানুরূপ নয়। পাশাপাশি যথাযথ প্রক্রিয়ায় খনন না হলে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরিবেশ, এমন আশঙ্কাও বিশেষজ্ঞদের।


ইএ