বিদেশে এখন
0

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক: বিশেষজ্ঞ

তেল ও তরলীকৃত গ্যাস উৎপাদনে জোর দিলে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। ফলে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত ‘স্বাভাবিক’ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর কারণ হিসেবে ইউরোপের জ্বালানির বাজার ধরার পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিতে চান তারা। যদিও, পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, কার্বন নিঃসরণে শীর্ষে থাকা দেশ চুক্তি থেকে বের হয়ে আসলে, প্যারিস চুক্তি আক্ষরিকভাবে ব্যর্থ হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনের উল্টো দিকে ঝুলছে ১শ মিটার লম্বা ব্যানার। যাতে লেখা- ট্রাম্প 'ক্লাইমেট জেনোসাইড' এর সাথে জড়িত। থর্নহিলের জলবায়ু সচেতন এই সমাজকর্মীরা মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন ও বিরূপ প্রভাবের তোয়াক্কা করেন না।

একজন জানান, ট্রাম্প এমন এক স্বৈরাচারী শাসক যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়কে গুরুত্ব দেন না। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তার এমন সিদ্ধান্ত আমাদেরকেও প্রভাবিত করবে।

লন্ডনে যখন জলাশয়ের ধারে এই ব্যানার টানানো হচ্ছে তখন দ্বিতীয় দফায় প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও, চুক্তি থেকে পুরোপুরি বের হতে যুক্তরাষ্ট্রের সময় লাগবে আরও এক বছর।

২০১৭ সালেও ক্ষমতা গ্রহণের পর এই একই কাজ করেছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতার পালাবদল হলে ২০২১ এ ট্রাম্পের ঐ নির্বাহী আদেশ বাতিল করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

২০২১ সালে গৃহীত প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্য সীমাবদ্ধ রাখা। যদিও বিশ্বের উষ্ণতম বছর হিসেবে বিবেচিত ২০২৪ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

ন্যাশনাল এনার্জি ইমার্জেন্সি ঘোষণার পর দেশে তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হলে প্যারিস চুক্তি অনুসারে কার্বন নিঃসরণ ও গড় তাপমাত্রা হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না ওয়াশিংটন। এমন পরিস্থিতিতে চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলে কার্বন নিঃসরণ নিয়ে কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না ট্রাম্প প্রশাসনের।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল জেরার্ড বলেন, ‘বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা থাকলেও, পরিসংখ্যান বলছে, আমরা ইতোমধ্যে তা অতিক্রম করেছি। যতদিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে দূরে থাকবে, কার্বন নিঃসরণ কামানোর কোনো দায় থাকবে না তাদের।’

নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে ব্যর্থ করে দিতে পারে বলে মনে করছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর।

বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি, কার্বন নিঃসরণে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দেশ যদি প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসে, অনেক উন্নত রাষ্ট্র তাদের অনুসরণ করতে পারে বলে শঙ্কা তাদের।

অধ্যাপক ও জলবায়ু আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা ভয়েট বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সমাদৃত এই চুক্তি থেকে সরে আসা খারাপ লক্ষণ। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে জড়িত রাষ্ট্রগুলো ধারণা করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চুক্তি মানছে না, তাদেরও বিশেষ কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এতে করে প্যারিস চুক্তি আক্ষরিক অর্থেই ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও প্যারিস চুক্তি থেকে সরে এসেছে ইরান, ইয়েমেন, লিবিয়ার মতো দেশ। জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়ে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের প্রতিনিধিরা অসংখ্যবার দাবি করেছেন, উন্নত দেশগুলোর স্বেচ্ছাচারী কার্বন ব্যবহারের খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের।

ফলে, দেশের স্বার্থ রক্ষায় প্যারিস চুক্তিকে উপেক্ষা করার যে ট্রেন্ড তৈরি করলেন ট্রাম্প, অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশ তা অনুসরণ করতে শুরু করলে, জলবায়ু ইস্যুতে চরম পরিণতি অপেক্ষা করছে পৃথিবীর সামনে।

এএইচ