২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া মুষলধারের বৃষ্টিতে অঙ্গরাজ্যটির আবহাওয়া বৈরি ছিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শীতকালীন ঝড়ে তখন একফুট পানির নিচে ডুবে ছিল লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তাঘাট। মারাত্মক দুর্যোগ বিপর্যয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিল বাসিন্দাদের।
বৃষ্টি, কাঁদা আর বন্যার সঙ্গে লড়াই কড়া ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ঠিক এক বছর পর এবারের শীতকালের গল্পটা পুরো উল্টো। দাবানলের লেলিহান শিখায় দাউদাউ করে পুড়ছে হলিউড তারকাদের নগরী হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেস। অর্থাৎ ৩৬৫ দিন আগেও যে শহর থেকে বৃষ্টির পানি সরাতে যুদ্ধ করতে হয়েছিল, সেই শহরেই পর্যাপ্ত পানির অভাবে দাবানলের আগুন নেভাতে নাস্তানাবুদ দমকলবাহিনীর সদস্যরা। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের মৌসুম শেষ হয় অক্টোবরে।
উষ্ণায়নের বিশ্বে দাবানলের কোনো মৌসুম হয় না তার সবশেষ উদাহরণ হয়ে উঠলো লস অ্যাঞ্জেলেসের এই অগ্নিঝড়। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই কেনো দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়া আচরণে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন। কেনো এত ভয়ংকর হয়ে ওঠে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল।
বহুরূপী দুর্যোগের নগরী হয়ে ওঠা ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে এসব প্রশ্নের জবাবে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল সোয়েন বলেছেন, গত শীতকালের বৃষ্টিপাতে অঞ্চলটিতে গাছপালার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। অসময়ে বৃষ্টির পর বর্ষায় বৃষ্টি না হয়ে খরা দেখা দেয়ায় গাছপালার বংশ বিস্তার বেড়েছে। আর অতি বৃষ্টি থেকে অতি শুষ্ক অবস্থার পরিবর্তনেই এবারের শর্তে দাবানলের মঞ্চ হয়ে উঠেছে লস অ্যাঞ্জেলেস। সান্তা আনা ঝড়ে যা বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের জলবায়ু বিজ্ঞানী ড. ড্যানিয়েল সোয়েন বলেন, ‘দমকল কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি অন্যান্য সহযোগী সংস্থাও কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বাতাসের তীব্রতায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া দাবানলের আগুন নেভানো যাচ্ছে না। গত শীতকালে বৃষ্টির পর মাঝখানে খরার পর আরেকটা শীতকাল আসায় এই হাল।’
গত শীতের পর বর্ষা মৌসুমেও যদি লস অ্যাঞ্জেলেসে বৃষ্টি হতো, তাহলে দাবানল হলেও এতটা ধ্বংসাত্মক হতো না বলেও মত জলবায়ু বিজ্ঞানীদের। জীবাশ্ম জ্বালানির দ্বারা দূষণে গ্রহ উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে শুষ্ক থেকে আর্দ্র এবং আর্দ্র থেকে শুষ্ক অবস্থার এই বড় পরিবর্তন চক্রটি ওয়েদার হুইপ্ল্যাশ নামে পরিচিত। গবেষণা তথ্য বলছে, দ্রুত আবহাওয়ার এই চরম পরিবর্তনে আকস্মিক দাবানল এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপদগুলোর তীব্রতা আরও বাড়ছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কখন কোন মৌসুমে কি ঘটবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, একটি অঞলে দাবানল বর্ষা মৌসুমে কমপক্ষে ২-৩ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। এবারের বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় অতিমাত্রায় শুষ্ক পরিবেশই শীতকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের অন্যতম কারণ।