বিদেশে এখন
0

পুনরায় পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার হুমকি ট্রাম্পের

সম্প্রতি নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার হুমকি দিলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে দিনদিন হুমকির পড়ছে শত বছরের পুরানো বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের অন্যতম এই নৌরুট। আগে যেখানে দৈনিক ৩৬ থেকে ৩৮টি জাহাজ এই খাল দিয়ে চলাচল করতো, সেখানে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২২টি তে। উল্টো খাল পার হতে দুই পাশে অপেক্ষমাণ থাকছে আরও দেড় শতাধিক জাহাজ। এ অবস্থায় বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নতুন করে এই খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে বিপাকে পড়তে পারেন ট্রাম্প।

১৯১৪ সালের ১৫ আগস্ট বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের কৃত্রিমভাবে তৈরি করা পানামা খাল দিয়ে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ যাত্রা শুরু করে। ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জলপথ এখনও বিশ্বের স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নির্মাণশৈলীগুলোর একটি। আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে কম সময়ে যাওয়ার পথ এই পানামা খাল, যা নিউইয়র্ক থেকে স্যান ফ্রান্সিস্কোর দূরত্ব কমিয়েছে ১২ হাজার ৬শ' কিলোমিটার। এখনও বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ রুটগুলোর একটি এই পানামা খাল। এবার জেনে নেয়া যাক, কীভাবে কাজ করে এই খাল।

এই খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয় কৃত্রিমভাবে তৈরি জলাধার গাতুন। মানুষের তৈরি বিশ্বের প্রথম বৃহত্তম লেক এটি। কিন্তু খরার কারণে এই লেকে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। জলবায়ু পরিবর্তন চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক এই জলপথকে। কারণ পানামা খাল দুটি বড় জলাধারের যোগসূত্রে তৈরি হয়নি। অত্যাধুনিক কারিগরি দক্ষতায় তৈরি এই খালে আছে লক সিস্টেম আর এলিভেটর, যা জাহাজগুলোকে পানির উচ্চতা বাড়িয়ে কমিয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে সহায়তা করে।

এমন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে, কারণ পানামা খাল যেখানে সংযুক্ত হয়েছে, তার দুপাশের সমুদ্রের উচ্চতা দুই রকম। প্রশান্ত মহাসাগরের পানির উচ্চতা আটলান্টিকের তুলনায় বেশি। যে কারণে লক সিস্টেম দেয়া হয়েছে, যাতে করে সমুদ্রের উচ্চতা বিবেচনায় উপর-নিচ করে খালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জাহাজ চলাচল করতে পারে। এই সিস্টেমে মোট ১২ টি লক আছে। সাধারণত লোকগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। তবে কখনও কখনও পানি একেবারেই কম থাকে।

একটি জাহাজ আসা শুরু করলে প্রথম লকটি কাজ করে, যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত। চেম্বারে প্রবেশের পর প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পানির উচ্চতা বাড়িয়ে কমিয়ে এক চেম্বার থেকে অন্য চেম্বারে নেয়া হয় জাহাজ। পার্শ্ববর্তী গাতুন লেক থেকে চেম্বারে সরবরাহ করা হয় পানি, যে কারণে এই লেকে প্রচুর পরিমাণে পানির মজুত থাকতে হয়। মাধ্যাকর্ষণ বলে প্রাকৃতিকভাবে এই লেক থেকে পানি চলে যায় চেম্বারে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই লেকে দেখা দিয়েছে চরম পানির সংকট।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এই প্যাসেজ পার করতে একটি জাহাজের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৫ কোটি গ্যালন পানি। গেলো বছর লেক গাতুনের পানি কমায় জাহাজ চলাচল কমে গিয়েছিলো এই খাল দিয়ে। এই লেক পানামার ৪৪ লাখ মানুষের অর্ধেকের সুপেয় পানির উৎস। লেকের পানির সাহায্যে আটলান্টিক-প্রশান্ত মহাসাগরের এই রুট ব্যবহার করে প্রতিবছর ২৭ হাজার কোটি ডলারের পণ্য আনা নেওয়া করা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিপিং টার্মিনাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এসএসএ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পানামা খাল পরিচালনার জন্য পানি এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। যা তৈরি হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে। মূলত বৃষ্টি স্বল্পতায় পানামা খালে গাতুন লেকের পানি অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে পানি স্বল্পতা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০ বছরে একবার এলনিনোর কারণে বৃষ্টিস্বল্পতা হলেও গেলো ২৬ বছরে তৃতীয়বারের মতো ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে বৃষ্টিস্বল্পতা দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই পথের বিকল্প খুঁজতে তৈরি করতে হবে বিকল্প পানির উৎস। রিও ইন্দো নদীর কাছে একটি কৃত্রিম মজুদাগার তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছিল পানামার সুপ্রিম কোর্টে। এই মজুদাগার পানি ব্যবহার করে লেক গাতুনে পানি সরবরাহ করে দৈনিক ৩৬ থেকে ৪০ টি জাহাজ এই খাল দিয়ে চলাচল করতে পারবে। ১৬০ কোটি ডলার ব্যয়ে ওই বাঁধ তৈরিতে এরই মধ্যে সায় দিয়েছেন পানামার সুপ্রিম কোর্ট। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই বাঁধ তৈরি হলে আপাতত ৫০ বছরের জন্য সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু নেতিবাচক দিক হলো, এই বাঁধ তৈরি হলে বিপাকে পড়তে পারেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। বন্যায় ভেসে যেতে পারে ঘরবাড়ি, গৃহহীন হতে পারেন স্থানীয়রা।

ইএ