প্লাস্টিক বর্জ্য মানব স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ুর জন্য হুমকিস্বরূপ। দুই বছর আগে ১৭৫টি দেশ এ বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এরপর জাতিসংঘের চার দফার আলোচনার পরও তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলোর বিরোধিতায় তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০২৪ সালের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ শেষ করার ভিত্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতিরও খবর নেই। বিশ্বে এখনও টিকে আছে ৭১২ বিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিক শিল্প।
এবার দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দর নগরী বুসানে জাতিসংঘের চূড়ান্ত দফার আলোচনায় বৈশ্বিক চুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। যেখানে প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও সামুদ্রিক পরিবেশের উপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিসপিসের এক গবেষণা বলছে, আয়োজক দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদন করে। যা জাপান ও তাইওয়ানের সমান।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে একটি কার্যকর আইন করার আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জলবায়ু কর্মীরা। তাদের মতে, দূষণ বন্ধের অন্যতম উপায় প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘কোরিয়া ফেডারেশনের পাঁচ শতাধিক কর্মীর সঙ্গে ১০টি দেশের জলবায়ু কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে একটি আইন হবে এটি আমাদের আশা।’
আরেকজন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াতেও প্লাস্টিক একটি বড় সমস্যা। জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলো প্লাস্টিক সংকটের জন্য দায়ী। তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর চুক্তিটি কার্যকর হয়নি। প্লাস্টিক দূষণের জন্য গ্রাহকরদেরও দায়ী করেন এই বিশেষজ্ঞ।
রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট অ্যান্ড সোসাইটির পরিচালক হান বিটসনারা বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হলে, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে জোর দিতে হবে। তাদের পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজাতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে কোম্পানির খরচ বাড়বে। ফলে পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া নতুন খরচ মেটানোর কোনো বিকল্প নেই কোম্পানির।’
এবারের আলোচনার লক্ষ্য ভবিষ্যতে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার দুটোই কমানো। তা না হলে আগামী ১০ বছর পর প্লাস্টিক বর্জ্যে ছেয়ে যাবে গোটা বিশ্ব। আর ২০৬০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়বে তিনগুণ। যার অর্ধেক হবে অব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। আর প্লাস্টিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হবে সাব-সাহারান আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলে।