মাঝ আকাশে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। পৌষ কিংবা মাঘ মাস নয়, কার্তিকের দুপুরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির আকাশ। যদিও দিল্লীবাসীর জন্য কুয়াশা আর ধোঁয়ায় মোড়ানো স্মগি ওয়েদার নতুন কিছু নয়।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘দেখতেই পারছেন দূষণ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। কখনও কখনও নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।’
আরেকজন বলেন, ‘আবহাওয়া আগে এমন ছিল না। নগরায়ণের উদ্দেশে নির্মাণ কাজ বাড়তে থাকায় দূষণও বাড়ছে। দূষিত বাতাসের কারণে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।’
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে কোনো শহরের অবস্থান শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্য থাকলে সেই অঞ্চলের বাতাসকে দূষণ মুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর কোনো শহরের বাতাসের মান ইনডেক্সে ৪শ থেকে ৫শ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়। গেল বুধবার থেকে এই ইনডেক্সে দিল্লির অবস্থান ৩২০ থেকে ৩৫৮ এর মধ্যে ওঠানামা করছে।
ভারতীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা, সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ' বা সাফার জানায় আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী দিল্লিতে সব ধরনের বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে সংস্থাটি জানাচ্ছে, শারদীয় দুর্গাপূজা থেকে ধনতেরাস পর্যন্ত ভারতীয়রা বিপুল পরিমাণ বাজি পোড়ায়। এছাড়া, চলতি মৌসুমেই মাড়াই করা ফসলের উচ্ছিষ্ট পোড়ানোর হিড়িক পড়ে কৃষকদের মধ্যে। মূলত এই দুই কারণে দিল্লির বাতাসে কুয়াশা ও ধোয়ার একটি পুরু আস্তরণ বা স্মগ জামা হয়।
পরিবেশবাদীদের পাশাপাশি নয়াদিল্লির দূষিত বাতাস নিয়ে উদ্বেগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই বাতাসে নিশ্বাস নিলে রাজধানীবাসীর হার্ট ও ফুসফুসে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
মেদান্তা মেডিকেল স্কুলের পরিচালক রানদ্বীপ গুলেরিয়া বলেন, ‘আমি মনে করি শুধু হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুস ছাড়াও এই দূষণ মানবদেহের যে কোনো অংশের ক্ষতিসাধন করতে পারে। বাতাসে মিশে থাকা দূষিত পদার্থ শরীরের যে কোনো অংশে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ডিমেনশিয়া, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, ডায়াবেটিসের মতো অসুখ বাঁধানোর সক্ষমতা আছে দূষিত বাতাসের।’
গেল সপ্তাহে, ফসলি জমি পরিষ্কার করতে ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয়ায় ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানা থেকে ১৬ জন কৃষককে আটক করে পুলিশ। শীতের আগে মাঠ পরিষ্কারের এই প্রবণতাকে দিল্লির বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ভারতের রুটির ঝুড়ি খ্যাত পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ফসলের উচ্ছিষ্ট পোড়ানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
বায়ু দূষণ বন্ধে দিল্লির প্রধান সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার দূষণ রোধে গণপরিবহন ও মেট্রোরেল ব্যবহারের আহ্বান জানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।