বিদেশে এখন
0

উভয় সংকটে ইরান

উভয় সংকটে ইরান। ইসরাইলের হামলার জবাব দিলে মধ্যপ্রাচ্যে বাড়বে উত্তেজনা। আর জবাব না দিলে প্রকাশ পেতে পারে দুর্বলতা। ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে না চাইলেও প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে ইরান। পশ্চিমা নেতারাও এখানেই এর শেষ চান।

ইরান ও ইসরাইলের পুরোনো বিরোধ সম্প্রতি গাজা যুদ্ধের ইস্যুতে চরমে পৌঁছেছে। ইসরাইলি হামলায় সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়। জবাবে গেল ১৩ এপ্রিল ইসরাইল ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এরপর ইরানের মাটিতে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর গেল পহেলা অক্টোবর দ্বিতীয়বার ইসরাইল ভূখণ্ডে হামলা চালায় তেহরান।

পহেলা অক্টোবরের পর থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরাইল। অবশেষে শনিবার ভোররাতে তেহরানসহ কয়েকটি প্রদেশে সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিল তারা। তেলআবিবের বক্তব্য, ইসরাইলকে ফের আক্রমণ করলে শত্রুদের চড়া মূল্য দিতে হবে। দুই দেশ এখন পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও, হামাস ও হিজবুল্লাহর হয়ে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত আছে ইরান।

ইরান-ইসরাইলের পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এ অবস্থায় ইরান কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটি দেখার বিষয়। দেশটি এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তারা অবশ্যই প্রতিশোধ নেবে। তবে ইরান আবার হামলা চালালে ছেড়ে কথা বলবে না ইসরাইলও।

অবস্থান সবপক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মতে, ইরানের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত হবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আশা, দুই দেশের উত্তেজনার এখানেই সমাপ্তি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ইসরাইলিরা ইরানের সামরিক ঘাঁটি ছাড়া অন্যকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেনি। আমার আশা দুই দেশের পাল্টাপাল্টি আক্রমণ এখানে শেষ হবে।’

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ইরানের আক্রমণের প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার ইসরাইলের আছে। একইভাবে আমার পরিষ্কার বার্তা, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা এড়াতে হবে এবং সব পক্ষকে সংযত ব্যবহার দেখাতে হবে। ইরানের পালটা প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত হবে না।’

তবে ইসরাইলি হামলায় উদ্বিগ্ন নন ইরানিরা। তাদের মতে ইসরাইলকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

ইরানিদের একজন বলেন, ‘তারা ইরানের আক্রমণের জবাব দিয়েছে। এতে ভয়ের কিছু নেই। পালটা প্রতিক্রিয়া দেখানোরও দরকার নেই ইরানের।’

আরেকজন বলেন, ‘ইসরাইল এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। ইরানের পক্ষ থেকে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন নেই।’

ইরান বারবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ-যুদ্ধ চায় না। ইরানের অনিচ্ছা তাদের দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। যা তার মিত্র দেশ ও গোষ্ঠী উভয়ের ওপরই চাপ বাড়াবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী মোড়ল হয়ে উঠতে পারে ইসরাইল। এছাড়া, ইসরাইলিদের রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন দিয়ে পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব।

এদিকে, ইসরাইলও যে চুপ করে বসে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ইরানের তেল, গ্যাস ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালে যুদ্ধ মোড় নেবে নতুন মাত্রায়। মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান ও ইসরালের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।

ইএ