ছয় বছরে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হচ্ছিল না, ১৯৪৫ সালে স্রেফ দু'টো পারমাণবিক বোমা সে সমাপ্তি নির্ধারণ করে দেয়। তাহলে কত ভয়ানক ছিল সে হামলা? জানা যাবে না নিহত প্রায় আড়াই লাখ মানুষের কথা। কিন্তু যারা বেঁচে গিয়েছিলেন সেদিন, ৮০ বছর ধরে ভুগছেন তেজষ্ক্রিয়তায়। মানবজাতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক এ অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আজও বিশ্বকে বলে যাচ্ছেন সে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরষ্কারজয়ী জাপানি সংগঠন নিহোন হিদানকিয়ো'র প্রবীণ কর্তাব্যক্তি, যারা নিজেরাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলার সাক্ষী ও ভুক্তভোগী, তারা বলছেন, এ সম্মাননা ও স্বীকৃতির ফলে আরও জোরদার হলো বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে তাদের লড়াকু মনোভাব।
জাপানের নিহোন হিদানকিয়োয়ের কো-চেয়ার তিরুমি তানাকা বলেন, 'পরমাণু অস্ত্র পৃথিবীর বুক থেকে নির্মূলের বিষয়ে প্রতিটি মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। শুধু হামলার ভুক্তভোগীদের জন্য এটি সমস্যা নয়। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করা দরকার কারণ যুদ্ধক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলে সমগ্র মানবজাতি, বিশ্বের প্রতিটি নাগরিক সংকটে পড়বে।'
নিহোন হিদানকিয়োয়ের উপ-মহাসচিব মাসাকো ওয়াদা বলেন, 'পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো মানে নিজের ওপরও সে হামলা ডেকে আনা। যুক্তরাষ্ট্র আপনার দিকে পারমাণবিক বোমা ছুঁড়লে আপনিও থেমে থাকবেন না। পারমাণবিক হামলার শিকার দেশও বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হলে তা হবে আমাদের জন্য ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, প্রশ্নবিদ্ধ হবে আমাদের সব চেষ্টা।'
প্রায় আড়াই বছর ধরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তীব্রতা যেমন বেড়েছে, তেমনি গত এক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-হামাস সংঘাত এখন হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি এবং ইরান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়ে আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তায় রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লে পারমাণবিক বোমা দিয়ে পাল্টা জবাবের হুমকি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
অন্যদিকে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে থামাতে ইরানের পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালাতে চায় ইসরাইল। সবমিলিয়ে যখন পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কায় ঘিরে ধরছে সারা বিশ্বকে, তখনই নোবেল শান্তি পুরষ্কারের মাধ্যমে আরও একবার সারা বিশ্বে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার আলোচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ালো।
জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি ইজুমি নাকামিৎসু বলেন, 'স্রেফ ভাবুন যে আপনার ওপর পারমাণবিক বোমা হামলা হলো আর আপনি এমন সর্বনাশা ধ্বংসযজ্ঞের কবলে পড়লেন। খুব কঠিন অভিজ্ঞতা, যা আপনি হয়তো মনে করতে চাইবেন না। এই ভুক্তভোগীরা সত্যিকার অর্থেই সাহসী। তাই বিশ্বে শান্তি ফেরাতে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও নির্মূলের চেষ্টায় বারবার নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে যাচ্ছেন তারা।'
বিশ্বের মধ্যে পারমাণবিক হামলার শিকার একমাত্র দেশ জাপানের বাসিন্দাদের মধ্যেও বাড়ছে দ্বিতীয় হামলার মুখে পড়ার শঙ্কা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশটির মাটিতে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের ঘাঁটি গড়তে চায় মার্কিন প্রশাসন। বিতর্কিত এ চুক্তিটি বারবার প্রত্যাখ্যান করায় আবারও মার্কিন ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে কি না জাপানকে, সে আতঙ্কই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাধারণ জাপানীদের।