বিদেশে এখন
0

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থাকায় ইসরাইলকে চাপ দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র পরিণত হয়েছে নখ দন্তহীন বাঘে। গাজার পর লেবাননে যুদ্ধ শুরু হলেও পশ্চিমাদের কার্যক্রম সীমিত যুদ্ধবিরতির আহ্বান পর্যন্তই। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থাকায় ইসরাইলকে চাপ দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তেল আবিবকে কোটি ডলারের অর্থ সহায়তার মাধ্যমে তুষ্টিকরণের রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নিজেদের বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন মিত্র হবার অর্থ দাঁড়ায় সুপারপাওয়ার রাষ্ট্রটির কাছ থেকে অফুরন্ত সমর্থন। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পেছনেও কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব। তবে ছোট্ট এই ইসরাইল এখন ছড়ি ঘুরাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের ওপর।

১২ দিন ধরে চলা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। হাসান নাসরাল্লাহ ও দক্ষিণাঞ্চলীয় ফ্রন্টের প্রধান আলি কারাকি নিহতের পর কার্যত নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছে হিজবুল্লাহ। ইতোমধ্যেই দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন সাত শতাধিক মানুষ। বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ। পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র ১২টি দেশ ২১ দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব জানালেও তা প্রত্যাখানে সময় নেয়নি ইসরাইল।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণ দেয়ার আগ পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষীণ আশা ছিল পশ্চিমাদের মনে। তবে আগ্রাসী ভাষণে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। এমনকি ভাষণ শেষের কিছুক্ষণ বাদেই হামলা চালানো হয় বৈরুতে হিজবুল্লাহ'র সদর দপ্তরে। যাতে নিহত হন হিজবুল্লাহ প্রধান। নিউইয়র্কে বসে এই হামলা চালানোর নির্দেশ দেন খোদ নেতানিয়াহু। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, হামলা সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই জানতো না পেন্টাগন।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে ইসরাইল প্রসঙ্গে কী নখদন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা? বিবিসি'র বিশ্লেষণ বলছে, হিজবুল্লাহ ও হামাসকে বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করায় আইন অনুসারে সন্ধিতে রাজি করাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দোরগোড়ায় চলে আসায় চাপ দেয়া যাচ্ছে না ইসরাইলকে। কারণ এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ইহুদি সমর্থক মার্কিন ভোটারদের মনে।

আগ্রাসী হবার বদলে ইসরাইলকে তুষ্টকরণের রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছেন জো বাইডেন। প্রায় বছরব্যাপী চলা যুদ্ধের পরেও সম্প্রতি তেল আবিবকে ৮৭০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই তুলে ধরেন ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা। একসময় উত্থাপন করেন গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব। নেতানিয়াহু প্রস্তাব না মানলেও এমন নীতির মাধ্যমে দুই কূল রক্ষা করে চলছে ডেমোক্র্যাটরা।

লেবাননে যেকোনো মুহূর্তে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। উত্তরাঞ্চলীয় সীমানায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত দুই ব্রিগেড সেনা। হিজবুল্লাহ প্রধান নিহত হলেও এখনো ৫০ হাজারের বেশি সক্রিয় সদস্য আছে গোষ্ঠীটির। পশ্চিমা কূটনীতিকদের আশঙ্কা, স্থল অভিযানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে যুদ্ধ। তবে ইসরাইলের আগ্রাসী পদক্ষেপ রুখতে যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না বলেও মনে করছেন তারা।

ইএ