জাতিগত সংঘাতে অশান্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। রাজধানী ইম্ফল ও কংপোকপি শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কেন্দ্র করে সম্প্রতি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যে। ৩২ লাখ জনসংখ্যার এই রাজ্য হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কুকি জোমি গোষ্ঠীর সংঘাতে এখন বিভক্ত। মেইতেই জনগোষ্ঠীর বসবাস সমতলে আর কুকিদের বাস পাহাড়ি অঞ্চলে।
বিজেপি শাসিত সরকারের ওপর আর ভরসা রাখতে পারছেন না মণিপুরের বাসিন্দারা। এবার নিজেদের সুরক্ষায় নিজেরাই লড়াই করতে চান। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর দাবিতে মেইতেই জনগোষ্ঠী রোববার রাতে রাজ্যপালের বাসভবনের সামনে মশাল মিছিল করেছে। তাদের অভিযোগ, কুকি বিদ্রোহীদের সহায়তা করে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করছে।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, 'কেন্দ্র সরকার যদি আমাদের হয়ে লড়াই করতে না চায়, তাহলে আমরা নিজেরাই নিজেদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব। শত্রুদের মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা আছে।'
এদিকে, রক্তাক্ত সংঘর্ষ বন্ধে রাজ্য সরকারের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিজেপি শাসিত মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৮ জন বিধায়কসহ রাজ্যপাল লক্ষ্মণ আচার্যের সঙ্গে দুই বার সাক্ষাৎ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্রের ওপর আর ভরসা রাখতে পারছে না রাজ্য সরকার।
গেল দেড় বছর ধরে চলমান সংঘাত বন্ধে বার বার পদক্ষেপ নেয়ার পরও শান্তি ফেরেনি সেভেন সিস্টার্সের অংশ এই রাজ্যে। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি কুকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সরকারের অস্ত্রবিরতির চুক্তি বাতিলের দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। এছাড়াও, ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষার দাবিতে সীমান্তে বেড়া নির্মাণ, অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের দাবিও রাজ্যপালের কাছে তুলে ধরেন বিধায়করা।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেন, ‘মণিপুরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী শত বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করছে। আমরা এখানে কোনো বিভাজন চায় না। আমি সবার কাছে বিনীতভাবে আবেদন জানাচ্ছি। আপনারা নিজেদের এলাকা, নিজ গোত্র ও জাতির মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখুন। কোনো প্রকার গুজবে কান দেবেন না ।’
এদিকে, এখনও থমথমে গোটা মণিপুর। ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বন্দুক হামলার ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউই।
যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছেন তারা। মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় ৯২টি চেকপয়েন্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি অভিযান। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে এখন পর্যন্ত ১২৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
২০২৩ সালে মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেই জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরিসহ অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার আদেশ দেয়ার পর রাজ্যটিতে সংঘাত দানা বাধতে শুরু করে। এতে প্রাণ হারান কয়েকশ মানুষ। ঘরছাড়া হয়েছেন আরও প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দা। হাইকোর্টের বিতর্কিত নির্দেশ প্রত্যাহার করা হলেও শান্তি ফেরেনি সেভেন সিস্টার্সের রাজ্য মণিপুরে।