বিদেশে এখন
0

সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে অভিবাসন

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকাডুবিতে ১২ জনের প্রাণহানির পর আবারো আলোচনায় এসেছে ইউরোপে অভিবাসন প্রসঙ্গ। ২০১৪ সাল থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ২৯ হাজার। চলতি বছর ইইউ পাস করেছে অভিবাসন বিষয়ক কঠোর নীতিমালা। জোটের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত নীতিমালা নিয়ে আছে ব্যাপক মতানৈক্য।

উন্নত জীবনের আশায় প্রতিনিয়তই সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইউরোপে যাচ্ছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। ছোট ছোট নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই যাত্রায় নিয়মিতই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। মঙ্গলবার এমনই এক ঘটনায় ইংলিশ চ্যানেলে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ শিশুসহ কমপক্ষে ১২জন।

চলতি বছর ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন প্রায় সাড়ে ২১ হাজার মানুষ। গেল বছর এই সংখ্যা ছিল ২৯ হাজারের বেশি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এর প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই নৌরুটে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ২ শতাধিক।

এতো ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেনো অবৈধ পথই বেঁছে নিচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা?

বার্তা সংস্থা বিবিসির তথ্য বলছে, ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইউরোপ আসার ক্ষেত্রে এগিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্রপীড়িত জনগণ। শীর্ষ ৫ দেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও সিরিয়া। তবে ভূমধ্যসাগরের চিত্র আর ভয়াবহ। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ কিংবা প্রাণহানির শিকার হয়েছেন ২৯ হাজারের বেশি মানুষ।

আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন পরিণত হয় ভয়াবহ সংকটে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত যুদ্ধ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মাইগ্রেশন পলিসি ডেভলপমেন্টের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ১১ কোটি। যাদের অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় হচ্ছেন দেশান্তরী।

মূলত তিনটি রুট দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেন শরণার্থীরা। পশ্চিমাঞ্চলে মরক্কো থেকে স্পেন, মধ্যাঞ্চলে লিবিয়া ও তিউনিশিয়া হয়ে ইতালি এবং উত্তরাঞ্চলে সিরিয়া ও তুরস্ক হয়ে গ্রিস। এক্ষেত্রে সমুদ্র পাড়ি দিতে অর্থের বিনিময়ে সাহায্য করেন দালালরা। প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়েই ঘটে বিপত্তি। বিভিন্ন সময় খবর মিলেছে, বিপুল অর্থ নেয়ার পরেও অভিবাসন প্রত্যাশীদের দেয়া হচ্ছে ডিঙ্গি নৌকা। অন্যদিকে মুক্তিপণ আদায়, যৌন নিপীড়ন ও মানব পাচারের ঘটনাও শোনা যায় নিয়মিত।

বিপুল সংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশীর ঢল সামলাতে গেল এপ্রিলে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপের সীমানা সুরক্ষিত করতে জোটটি চুক্তি করে আফ্রিকার ৯টি দেশের সঙ্গে। এতে বলা হয়, দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হবে ৫৫০ কোটি ইউরো। পাশাপাশি ইউরোপে অনুপ্রবেশ করা ব্যক্তিদের বায়োমেট্রিক ডেটার আওতায় শনাক্ত করা হবে ৭দিনের মধ্যে। যেসব দেশ থেকে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের হার বেশি, তাদের নাগরিকদের অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়া উত্তীর্ণের মাধ্যমে ইউরোপে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে। অনুত্তীর্ণ হলে পাঠিয়ে দেয়া হবে নিজ দেশে।

অন্যদিকে যেসব দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের হার কম, ১২ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে সেসব দেশের নাগরিকদের আশ্রয় প্রক্রিয়া। এসময় অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটকে রাখা যাবে সীমান্তে। এজন্য গ্রিস, সাইপ্রাস, ইতালি, মাল্টা, স্পেন ও ক্রোয়েশিয়ায় তৈরি করা হবে ৩০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হোল্ডিং সেন্টার। কর্তৃপক্ষ তাদের ইউরোপে বসবাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

অবৈধ অভিবাসীর ঢল সামলাতে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে ইউরোপের সীমান্ত সংলগ্ন দেশগুলোতে। তবে ডাবলিন রেগুলেশনের আওতায় পরিবর্তন আসছে এই ব্যবস্থাতেও। ফার্স্ট কান্ট্রি নীতির আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের প্রাথমিক আশ্রয়স্থল হবে প্রথম প্রবেশ করা দেশটিতেই। যদিও জোটভুক্ত সদস্যদেশগুলোকে কোটা প্রক্রিয়ায় নিতে হবে কিছু আশ্রয়প্রত্যাশীকে। অন্যথায় শরণার্থীকে স্থান দেয়া দেশগুলোকে দিতে হবে আর্থিক সহায়তা।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, নতুন আইনের আওতায় অভিবাসন প্রত্যাশী, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। দুই বছর ট্রানজিশন পিরিয়ড শেষে ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক চুক্তি।

ইএ