বিদেশে এখন
0

ইসরাইলি হামলায় রাফা ছেড়েছেন ৬ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি

ইসরাইলি হামলা থেকে বাঁচতে ১০ দিনে অন্তত ৬ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রাফা শরণার্থী শিবির ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের ৭৬তম নাকবা দিবসে আবারও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। এরমধ্যে বর্বরতা চালিয়ে গাজাবাসীর দুর্ভোগ দিন দিন বাড়িয়ে তুললেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনায় মেতেছেন খোদ ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালন্ত।

ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনে ধ্বংসস্তুপে রূপ নিয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। বিভিন্ন শহরে বাড়ি-ঘর ধুলার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ায় দক্ষিণের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির রাফা শহরে যে ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের জীবনও আজ বিপন্ন।

৬ মে থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ বার উচ্ছেদের হুকুম জারি করায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলা আতঙ্কে এখন পর্যন্ত রাফা ছেড়েছেন ৬ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে গত দু'দিনেই গেছেন দেড় লাখ। উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের শহরগুলোতেও হামলা অব্যাহত থাকায় প্রাণ রক্ষায় ছুটে চলাদের বেশিরভাগেরই জানা নেই, আশ্রয় নেবেন কে কোথায়।

ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা বলেন, 'কোথায় যুদ্ধবিরতি? কোথায় শান্তি? তারা শুধু গোলা ছুড়ছে। আমাদের বাড়িঘর ধ্বংস করছে আর মানুষ হত্যা করেছে।'

আরেকজন বলেন, 'গাজার কোনো এলাকা এখন নিরাপদ না। ইসরাইলি বাহিনী আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রেও হামলা চালাচ্ছে। আমরা কোথায় যাবো।'

ইসরাইলি বর্বরতায় থেমে নেই গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। তাদের ওপরও চালানো হচ্ছে আক্রমণ। প্রাণও যাচ্ছে অনেক ইসরাইলি সেনার। এমনকি যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য একমাত্র ইসরাইলকেই দুষছে সংগঠনটি।

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেন, 'সম্প্রতি মিশর ও কাতারের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাস সম্মতি জানিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিল। তবে দখলদাররা প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় রাফা ক্রসিং দখল ও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রাফায় আগ্রাসন শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সংশোধন এনে আলোচনা প্রক্রিয়া থমকে দিয়েছে ইসরাইল।'

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, হামাসের হাতে গাজার নিয়ন্ত্রণ থাকা অবস্থায় কার্যত কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব না। সেখানে ফিলিস্তিন শাসনের জন্য বিকল্প কাউকে প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'যতক্ষণ না এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, হামাস গাজাকে নিয়ন্ত্রণ করছে না। ততক্ষণ পর্যন্ত হামলা চলবে। হামাসকে অক্ষত রেখে কোনো সমাধান হবে না।'

যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধপরবর্তী গাজা ভূখণ্ড নিয়ে পরিকল্পনায় ব্যর্থ হওয়ার দাবি করে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এমনকি উঠে আসে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে গাজায় ইসরাইলি হামলার বিষয়ে সামরিক দিক নির্দেশনা নিয়ে দ্বিধা বিভক্তির কথাও। যুদ্ধের পর গাজা শাসনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলায়ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন পরিকল্পনায় আমাদের অর্জন দুর্বল হয়ে পড়বে। জিম্মিদের মুক্তিদানে হামাসের সঙ্গে কার্যকর আলোচনাও অকার্যকর হয়ে পড়বে। এমনকি গাজা নিয়ে পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এটি আমাদেরকে এক কঠিন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমি মনে করি, দ্রুতই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।'

এদিকে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছর পরও তাদের ওপর নির্যাতন, দখলদারিত্ব ও বর্বরতা না থামায় বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সম্প্রতি সেই উত্তাপ কিছুটা কমলেও ১৫ মে ফিলিস্তিনিদের মহাবিপর্যয় বা নাকবা দিবসে আবারও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার দু'টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘটে ভাঙচুরের ঘটনাও। এমনকি পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াও হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভবন দখলে নেয়ায় প্রায় ১০টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলে ধরপাকড়ও।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি এখানে দাঁড়িয়ে একটি ললিপপ খাচ্ছিলাম। কিন্তু ক্যাম্পাসের ঘটনার জেরে তারা আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। এই সিদ্ধান্ত সত্যিই লজ্জাজনক৷'

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় প্রাণহানি ৩৫ হাজার ২শ' ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহতের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

ইএ