গত সপ্তাহে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘আরটি’ জার্মান সেনাদের গোপন বৈঠকের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস করে। ইউক্রেনের জন্য অত্যাধুনিক দূরপাল্লার টরাস ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্রিমিয়া ব্রিজে হামলার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে বুন্দেসওয়ের নামে পরিচিত জার্মান সেনাবাহিনী নিজ উদ্যোগে এমনটি করেছে, নাকি জার্মান সরকার এতে জড়িত তা এখনও নিশ্চত হতে পারেনি রাশিয়া। জার্মানদের নিরাপত্তা ও বুন্দেসওয়ের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফাঁস হওয়া ৩৮ মিনিটের অডিও রেকর্ডিংয়ে জার্মান বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা টরাস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ঠিক করা হয় কের্চ ব্রিজ, যা রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডকে ক্রিমিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিতর্কের মধ্যে অডিওটি ফাঁসের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ক্রেমলিন মুখপাত্রের দাবি, রেকর্ডিং থেকে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে রাশিয়া।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে জার্মান সেনারা আলোচনা করেছে, তা ফাঁস হওয়া রেকর্ডিং থেকে বেশ ভালোভাবেই বুঝা যাচ্ছে। এর জন্য আলাদা করে আইনি কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট।
এদিকে আড়ি পাতা কেলেঙ্কারির উৎস জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। এমনকি ফাঁস হওয়া কথোপকথন পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা তাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলেছেন তিনি।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, রাশিয়ার দাবি করা অডিও রেকর্ডিং ফাঁসের ঘটনা একটি বড় বিষয়। খুব সতর্কতার সঙ্গে ও নিবিড়ভাবে তা দেখা হচ্ছে। খুব দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করা জরুরি।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, জার্মানির সঙ্গে বিভাজন তৈরির উদ্দেশে রাশিয়া তথ্য যুদ্ধ পরিচালনা করছে। ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন। আর ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র না পাঠানোর বিষয়টি আগেই নিশ্চিত করেছেন চ্যান্সেলর।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে পুতিন চাল চেলেছেন। যদিও তিনি সফল হবেন না। রেকর্ডিংয়ের বিষয়ে জড়িত সবকিছু তদন্তের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে জার্মানির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে মস্কো। অডিও ফাঁসের ঘটনায় জিজ্ঞেস করা হলে, সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান তিনি। আর বার্লিন বলছে, পূর্বনির্ধারিত অন্য বিষয় আলোচনার জন্য তাকে ডাকা হয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য জার্মানি। দেশটি ইউক্রেনকে ট্যাঙ্কসহ অস্ত্র সরবরাহ করছে যুদ্ধের শুরু থেকেই। জার্মানির এমন আচরণকে সম্মিলিত পশ্চিমা তৎপরতা বলে উল্লেখ করেছে রাশিয়া।