বিদেশে এখন
0

নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার

সবশেষ অভ্যুত্থানের ৩ বছর পার হতেই নিজেদের সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সংগঠন 'ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স' জোট একের পর হামলা করে জান্তা সরকারকে কোণঠাসা অবস্থায় ফেলেছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এতোদিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে বিদ্রোহীদের তিনটি সংগঠন মিলে 'ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স' নামে জোট গড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে জান্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদের পাশাপাশি সমর্থকরাও সেনাপ্রধানের পদত্যাগ দাবি করছেন।

জোটে যোগ দেয়া তিন বিদ্রোহী দল, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। আর জান্তাবিরোধী এই সম্মিলিত অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে 'অপারেশন ১০২৭'। আরও অনেক স্বেচ্ছাসেবী জাতিগোষ্ঠী এই বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।

অপারেশন ১০২৭ শুরু হওয়ার পরপরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। জান্তাদের অনেক সীমান্তচৌকি, অনেক এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। গত তিন মাসে এই অপারেশন কতোটা প্রভাব ফেলেছে, জান্তা বাহিনী কতোটা ক্ষতির শিকার হয়েছে, তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স অপারেশন ১০২৭ শুরু করে উত্তরের শান রাজ্য থেকে। এ অভিযানের সময় পরাজিত হওয়ার পাশাপাশি বিপুল লোকসানের সম্মুখীন হয় জান্তা বাহিনী। জেট ফাইটার থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান পর্যন্ত হারায় জান্তা। দেশজুড়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এবং তাদের মিত্রদের দখলে চলে যায়।

এখন পর্যন্ত এই অপারেশনে ধ্বংস হওয়া বিমান, তিনটি ফাইটার জেট এবং চারটি হেলিকপ্টারের দাম হবে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মার্কিন ডলার। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স উত্তর শান ও রাখাইন রাজ্যে অপারেশন ১০২৭-এর প্রথম তিন মাসে অন্তত আটটি ট্যাংক, ১৬টি সাঁজোয়া যান এবং দু’বার মাল্টিপল রকেট লঞ্চার জব্দ বা ধ্বংস করেছে।

গেল তিন মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আর্টিলারি শেল, গ্রেনেড, রকেট লঞ্চার, ড্রোন জ্যামার, হাউইটজার দখলে নিয়েছে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। এছাড়া ৩৬টির বেশি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ফাঁড়ি ও কমান্ড সেন্টার দখল করা হয়েছে।

নির্বাচিত সরকারপ্রধান অং সান সুচিকে হটিয়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর সংঘাত-সহিংসতায় দেশটিতে ১ কোটি ৮ লাখ মানুষ মানবিক সংকটে পড়েছে।