বিদেশে এখন
0

৬ মাসে সব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে জান্তা

আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ প্রধান সব সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। যুদ্ধ যতো জটিল রূপ নিচ্ছে, ততোই ম্লান হয়ে আসছে মিয়ানমার জান্তা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা। থাই সীমান্তবর্তী মায়াবতীসহ আগামী কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ভাগ্যের ওপরই নির্ভর করছে পরবর্তী পর্যায়ে যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নেবে মিয়ানমারে।

সেনা অভ্যুত্থানে বেসামরিক সরকারের পতনের পর থেকেই তিন বছরের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কবলে মিয়ানমার। তবে গেল ক'মাসে দেশজুড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘবদ্ধ আক্রমণে প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেকটাই কমেছে সেনাবাহিনীর। অঞ্চলের পর অঞ্চল বিদ্রোহীরা দখল নেয়ায় এখন অপেক্ষা জান্তার ভাগ্য নির্ধারণের।

গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নেতৃত্বভার নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। সেনাশাসিত সরকারের বিরোধিতায় গণআন্দোলন বর্তমানে রূপ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আদিবাসী বিদ্রোহীদের সশস্ত্র প্রতিরোধে। বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে কয়েক দশক ধরে।

গেল অক্টোবর থেকে আরাকান আর্মিসহ প্রভাবশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো একযোগে অভিযান তীব্র করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বাংলাদেশ- ভারত-চীন-থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত শহর ও সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্রেরও দখল নেয় বিদ্রোহীরা। যুদ্ধের এ পর্যায়ে দু'পক্ষই নিজ নিজ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে এবং সামনে এগোতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে মেঘের ঘনঘটা। বৃষ্টি আর কাদার মধ্যে স্থল যুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না কোনো পক্ষই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিমান বাহিনী আকাশপথেও হামলা চালাতে না পারলে এগিয়ে থাকছে বিদ্রোহীরাই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমে আরাকান আর্মির দাপট থাকা রাখাইন রাজ্য এবং মায়াবতী ও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলসহ চীন ও থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতে বাণিজ্য ও সামরিক চৌকির নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করছে, কোন পক্ষ জয়ী হবে। বর্ষার মৌসুম পুরোপুরি শুরুর আগেই এসব এলাকার অনেকগুলোতে আধিপত্য ফিরে পেতে চায় জান্তা। বিশেষ করে রাখাইনের বিভিন্ন অঞ্চল ও মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে কয়েক সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৌশল গ্রহণ করতে দেখা যেতে পারে সেনাবাহিনীকে।

ভঙ্গুর অর্থনীতি ও তারল্য সংকট, তার ওপর যুদ্ধক্ষেত্রে একের পর এক পরাজয়ের জেরে ক্ষমতা দখলের পর এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে মিয়ানমারের সেনাশাসিত সরকার। দেশে পাঁচ হাজার ২৮০টি সামরিক অবস্থানের অর্ধেকেরই দখল হারিয়েছে সেনাবাহিনী। যার মধ্যে আছে নিরাপত্তা চৌকি, ঘাঁটি ও প্রধান কার্যালয়। মার্কিন পিস ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যালঘু আদিবাসীদের যেসব অঞ্চল সেনাবাহিনীর দখলে ছিল, সেগুলোরও ৬০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা।

থাই কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ প্রধান সব সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে এসব সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জোট বেঁধে লড়াই করছে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ হারানোর মাধ্যমে বার্ষিক ১শ' কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হারিয়েছে মিয়ানমার জান্তা। মায়াবতী থেকে সেনাবাহিনীকে উৎখাত করা কারেন বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর অন্যতম পুরোনো শত্রু, যারা বর্তমানে লড়ছে মায়াবতীর দখল ধরে রাখতে। মায়াবতীর ৯শ' কিলোমিটার পশ্চিমে আঞ্চলিক সামরিক কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়ছে সেনাবাহিনী। যার অধীনে রয়েছে প্রায় ৮শ' কিলোমিটার দীর্ঘ চীন-মিয়ানমার গ্যাস পাইপলাইন।

ইএ