বিদেশে এখন
0

'৭৩৭ ম্যাক্স নাইন' নিয়ে সংকটে বোয়িং

বেস্ট সেলিং সেভেন-থ্রি-সেভেন ম্যাক্স নাইন নিয়ে বিপাকে বহুজাতিক বিমান নির্মাণ সংস্থা বোয়িং। মাঝ আকাশে বিমান থেকে দরজা খুলে যাওয়ার ঘটনায় একই মডেলের অন্য বিমান পরিদর্শনে ত্রুটি মিলেছে প্লাগ ডোরের বোল্টে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭১টি বিমানের পর ইন্দোনেশিয়াতেও গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে তিনটি বিমান। সোমবার নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ৮ শতাংশ দর হারিয়েছে বোয়িং।

গেলো শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড বিমানবন্দর থেকে উড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মাঝ আকাশে বিকট শব্দে বিমান থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়ে যায় দরজাটি। এরপর ১৭৭ জন আরোহীসহ বিমানটিকে পোর্টল্যান্ডে ফিরিয়ে এনে জরুরি অবতরণ করেন পাইলট।

দুর্ঘটনার সময় আলাস্কা এয়ারলাইন্সের বোয়িং সেভেন-থ্রি-সেভেন-ম্যাক্স নাইন বিমানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুটের বেশি উঁচুতে উড়ছিল। বিমানে থাকা যাত্রীদের ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায় কেবিনের মাঝামাঝিতে অবস্থিত সাইড প্যানেলে দরজাটির জায়গা ফাঁকা। জানা যায় মাত্র তিন মাস আগে আলাস্কা এয়ারলাইন্সকে বিমানটি সরবরাহ করে বোয়িং।

এ পর্যন্ত ১৪৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে বিমানটির মাধ্যমে। তদন্তের দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেইফটি বোর্ড জানায় বিমানটির নিরাপত্তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন তিনটি ফ্লাইটের বৈমানিকরা। কিন্তু সতর্কতা আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেইফটি বোর্ডের চেয়ার জেনিফার হোমেন্ডি বলেন, 'সব বিমান পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির আগের ফ্লাইটগুলোর যাবতীয় তথ্যও বিশ্লেষণ করেছি আমরা। ৭ ডিসেম্বর, ৩ জানুয়ারি এবং ৪ জানুয়ারির ফ্লাইটে বিমানের অটো-প্রেশারাইজেশন ফেইল লাইট জ্বলেনি।'

এ ঘটনায় সব আরোহী অক্ষত থাকলেও ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে একই মডেলের ৬৫টি বিমানের যাত্রা সাময়িক স্থগিত করে আলাস্কা এয়ারলাইন্স। এরই ধারাবাহিকতায় দেশজুড়ে ১৭১টি বিমানের যাত্রা বাতিল করে শুরু হয় তদন্ত।

একেকটি বিমান পরীক্ষা-নিরীক্ষায় লেগে যাচ্ছে চার থেকে আট ঘণ্টা। কয়েক হাজার ফ্লাইট স্থগিত বা বাতিল হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী।

যাত্রীরা বলেন, 'বিমান টিকিটের টাকা ফিরিয়ে নিতে নিজে এসেছি, এছাড়া আর উপায় ছিল না। চেক-ইনের আগ পর্যন্ত জানতামই না কী হয়েছে। ব্যাগ নেয়ার সময় বলা হলো যে ফ্লাইট বাতিল। এরপর এখানে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। লাইন একটুও নড়েনি।'

বিমান থেকে খুলে পড়া দরজা এবং প্লাগ- দুটিরই সন্ধান মিলেছে। গ্রাউন্ডেড বিমানগুলো পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এরই মধ্যে বেশ কিছু বিমানের প্লাগ ডোরে ত্রুটি মিলেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। অ্যারোস্পেস সাপ্লায়ার স্পিরিট অ্যারোসিস্টেমস বোয়িং সেভেন-থ্রি-সেভেন-নাইন ম্যাক্স বিমানে প্লাগ ডোর যুক্ত করার দায়িত্বে ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির নাম।

এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বেশ বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আলাস্কা এয়ারলাইন্স ৪.৬ শতাংশ এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ৩ শতাংশ দর হারিয়েছে পুঁজিবাজারে। গেল ক'দিনে দুটি বিমান সংস্থাই বাতিল করেছে কয়েকশ' ফ্লাইট। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে স্পিরিট অ্যারোসিস্টেমস এবং বোয়িং নিজে। ১৬ ও ৮ শতাংশ করে দাম কমেছে প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ারে।

উইনথ্রপ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের চিফ পোর্টফোলিও ম্যানেজার অ্যাডাম কুন্স বলেন, 'এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। স্রেফ ভীতির কারণেই শেয়ার দাম কমছে। এখনই সেরা সময় এতে বিনিয়োগ করার। কারণ এটি ক্ষণস্থায়ী দরপতন। প্রাথমিক শক কেটে গেলেই দর বাড়তে শুরু করবে বলে আশা করছি।'

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পর বোয়িং সেভেন-থ্রি-সেভেন-নাইন ম্যাক্স বিমান গ্রাউন্ডেড করেছে ইন্দোনেশিয়াও।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর