বিশ্বব্যাপী আমদানি পণ্যের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কারোপ বেশ নাড়া দিয়েছে বিশ্ব বাজারকে। আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান খুঁজছে নানা দেশ।
সর্বাধিক সম্পূরক শুল্কের কবলে পড়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মরিয়া হয়ে উঠেছে চীনও। তাই এশিয়ায় আধিপত্য বাড়াতে এবার নিজেই মাঠে নেমেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
পাঁচ দিনের সফরে ভিয়েতনামের পর মালয়েশিয়ায় তিনদিনের সফর করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। সফরে মালয়েশিয়ার বাণিজ্য ও পর্যটন থেকে শুরু করে রেল পরিবহন এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট ৩১টি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন শি জিনপিং।
সফরকালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আশ্বস্ত করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও গভীর করার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে মালয়েশিয়া।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, 'আমরা একসাথে দুই দেশের আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়াকে আরও সক্রিয় করতে কাজ করবো। আমাদের ভূখণ্ড এবং এর বাইরেও শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি আনার চেষ্টা করব।'
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, 'এখন এমন এক সময় যখন জোটভুক্ত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। দায়িত্ববোধ, নীতি ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমন বাস্তবতায় চীনের উদ্যোগগুলি আশার আলো দেখাচ্ছে।'
তবে চীনা প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক এই সফরকে মার্কিন শুল্কনীতির প্রতিক্রিয়া নয় বরং চীনের দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্বাসন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাঞ্জেলিন ট্যান বলেন, 'দেখে মনে হতে পারে আমরা চীনের দিকে ঝুঁকছি, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা চীনপন্থি হয়ে গেছি। চীন বান্ধব হওয়া আর চীনপন্থি হওয়া এক বিষয় নয়।'
এদিকে প্রায় ১২ বছর পর চীনা প্রেসিডেন্টের মালয়েশিয়া সফরে বাংলাদেশি শ্রমিকরা লাভবান হবেন বলে আশা করছেন প্রবাসীরা। দেশটিতে চীনা বিনিয়োগ আরও বাড়লে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। প্রবাসীরা বলছেন, কর্মী চাহিদা পূরণে বাইরে থেকে শ্রমিক আনতে হবে মালয়েশিয়াকে। যার অংশীদার হবে বাংলাদেশি কর্মীরাও ।
মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার বলেন, 'আলটিমেটলি মালয়েশিয়া দেশ হিসেবে সুবিধা পাবে। মালয়েশিয়া দেশ হিসেবে সুবিধা পেলে, এগুলো স্থাপিত হলে তারা তাদের ম্যানপাওয়ার আমাদের বাংলাদেশ থেকে এবং অন্যান্য যারা জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ, তাদের কাছ থেকে ম্যানপাওয়ার নিয়ে আসবে।'
মালয়েশিয়ার বাইনারি গ্র্যাজুয়েট স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. আসিফ মাহবুব করিম বলেন, 'মালয়েশিয়া চীনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার।'
২০২৪ সালে চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মোট বাণিজ্য ৪৮৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন রিঙ্গিতে পৌঁছেছে, যা মালয়েশিয়ার বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১৭ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস শুক্রবারে (১৮ এপ্রিল) মালয়েশিয়ার শেয়ার বাজারের সূচকও ঊর্ধ্বমুখী। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চীনা প্রেসিডেন্টের সফর এর মূল অনুঘটক।