আপাদমস্তক ব্যবসায়ী থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠা ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাজারে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আধিপত্য আরও জোরালো করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসতে না বসতেই শুল্ক ঝড়ে কাঁপিয়ে তুলছেন পুরো বিশ্বকে। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) নিউ অরলিন্সে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের তিনি জানালেন, বাণিজ্য নীতির আরেকটি বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন তিনি।
এ আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন ইস্পাত অন্য কোনো দেশের মালিকানাধীন হোক এমনটা চান না বলেই, এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। যার মাধ্যমে ইস্পাত খাতে যুক্তরাষ্ট্রের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আসবে বলেও দাবি ট্রাম্পের। এছাড়া যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক আরোপ করে রেখেছে, সেসব দেশের ওপর মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) কিংবা বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেবেন বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'একসময় আমাদের দুর্দান্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি ছিল মার্কিন ইস্পাত। অনেক সরকারের বোকামি এবং কোম্পানির খারাপ ব্যবস্থাপনার কারণে সেই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এটি আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুন করে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে এটি আবার খুব সফল অবস্থানে আসবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক ঝড় যদি ইউরোপের দিকে অগ্রসর হয় তবে পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক হয়ে এটি মোকাবিলা করার হুঁশিয়ারি দিলেন জার্মান চ্যান্সেলর। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউরোপে শুল্ক আরোপ করে তাহলে এক ঘণ্টার মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেন, 'যদি আমেরিকান নীতি শুল্ক ইউরোপের দিকে অগ্রসর হয়, তখন আমরা একসাথে কাজ করতে সক্ষম হব। এছাড়া এক হয়ে ইউরোপের ইস্পাত উৎপাদন খাত রক্ষা করব। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যৌথভাবে মোকাবেলা করবে।'
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালেও ইস্পাতের উপর ২৫শতাংশ এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কিন্তু পরে কানাডা, মেক্সিকো এবং ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক অংশীদারকে শুল্কমুক্ত কোটা দিয়েছিলেন। পরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রিটেন, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য এই কোটা বাড়িয়েছিলেন। আর এর জন্যই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মার্কিন ইস্পাত খাতের ক্ষমতা কমেছে বলে মনে করছেন ট্রাম্প।
আমেরিকান আয়রন অ্যান্ড স্টিল ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস হল কানাডা, ব্রাজিল এবং মেক্সিকো। তারপর দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম। আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী কানাডা। ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে ওয়াশিংটনের মোট আমদানির ৭৯ শতাংশের উৎসই ছিল অটোয়া। এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম স্ক্র্যাপ ও খাদের অন্যতম বড় সরবরাহকারী মেক্সিকো।