শুরু হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে শুল্ক যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের বহনকারী ফ্লাইট প্রবেশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আঞ্চলিক প্রতিবেশী কলম্বিয়া। আর এতেই চটে যান প্রেসিডেন্ট। শাস্তি হিসেবে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি কলম্বিয়ার ওপর মার্কিন রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা চাপালেও পরে তা প্রত্যাহার করে ওয়াশিংটন। পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেও কলম্বিয়াও পরে অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে সম্মতি দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলম্বিয়ার মাধ্যমে পুরো লাতিন আমেরিকাকে কড়া বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প।
কলম্বিয়া, লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। আর কলম্বিয়ার সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে দেশ দু'টির দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার। ওই বছর কলম্বিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল, স্বর্ণ, কফি আর গোলাপ ফুল সবচেয়ে বেশি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো অভিবাসীবাহী সামরিক বিমানকে কলম্বিয়ায় নামতে দেয়নি বোগোতা। এতেই চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
রোববারই (২৬ জানুয়ারি) শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কলম্বিয়ার আমদানি পণ্যে চাপিয়েছেন ২৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা, যা চলতি সপ্তাহেই দ্বিগুণ হতে পারে।
এছাড়া দেশটির জন্য স্থগিত করা হয়েছে মার্কিন ভিসা প্রক্রিয়া। পাশাপাশি কলম্বিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা প্রত্যাহার, জরুরি রাজস্ব, ব্যাংকিং ও অন্যান্য আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।
এদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া কলম্বিয়ায় প্রায় ১৬ হাজার অবৈধ মার্কিনি অবস্থান করছে বলে ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দেন কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্ট।
কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস গিলবার্তো মুরিলো বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ, নাগরিকদের মর্যাদা এবং তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা অক্ষুণ্ণ রাখতে সব ধরনের কূটনৈতিক পথ খোলা রাখবে বলে নিশ্চিত করছে কলম্বিয়া।’
সবমিলিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় বাণিজ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ ট্রাম্প প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলম্বিয়ার মাধ্যমে পুরো লাতিন আমেরিকাকে কড়া বার্তা দিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গুয়াদালুপ কোররিয়া-ক্যাবরিরা বলেন, ‘কলম্বিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেক অনেক বড় এবং কলম্বিয়ার অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই বাণিজ্যিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হলেও নিঃসন্দেহে কলম্বিয়াকে চাপে ফেলতে এবং অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে মেক্সিকোকে বার্তা দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া ট্রাম্পের জন্য কঠিন নয়।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো অভিবাসীবাহী ফ্লাইট অবতরণ করতে না দেয়া দ্বিতীয় দেশ কলম্বিয়া। এর আগে মেক্সিকো একই কাজ করলেও সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশটির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন।
তবে অবৈধ অভিবাসী প্রবাহ ও মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের কথা আগেই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।