চোখ ধাঁধানো এই প্রতিচ্ছবি দেখে মনে হতেই পারে, এই শিল্পকর্ম কোন শিল্পীর খেয়ালি মনের ভাবনা। হরেক রকম রঙের ছটায় যা একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু আসলে তা নয়। তুলি আঁচড় ভেবে ধোঁকা খেলেও এটা আসলে সুঁই-সুতার নিখুঁত ফোঁড়। আমাদের দেশে যা শুধু হাতের কাজ, চীনা নাগরিকদের কাছে তা শিল্পকর্ম। তাই এই শিল্পকে নিখুঁত করার যত চেষ্টা।
সুঝো বা সু এমব্রয়ডারি। সুনিপুণ এই হস্তশিল্পের উৎপত্তি চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুঝো নগরীতে। বিশ্বের প্রাচীনতম সুঁই-সুতার কাজের মধ্যে এটি অন্যতম। এই শিল্পকর্ম চীনা সূচিশিল্পের ধারক। এর ইতিহাস ২০০০ বছরের প্রাচীন। এই হস্তশিল্প চীনা লোকশিল্পের অনন্য এক ঐতিহ্য।
সুঝো নগরী রেশম ও সিল্ক কাপড় উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। চীনে মিং শাসনামলে সুঝো এমব্রয়ডারি এখানকার বাসিন্দাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তখন এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবারই রেশমি কাপড়ের উপর এই এমব্রয়ডারি করত। রাজপরিবারের পোশাকেও এই সূচিকর্মের চল ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালত বা রাজকর্মচারীদের ইউনিফর্মেও এই সূচিকর্ম থাকতো।
১৬০০ শতাব্দীতে চিং শাসনামলে বাণিজ্যিকভাবে প্রসার ঘটে এই এমব্রয়ডারির। সেই সময়ে, সুঝো শহরে ১০০ টিরও বেশি এমব্রয়ডারির ওয়ার্কশপ এবং বাজার ছিল। পোশাক, বালিশ, ব্যাগ, পর্দা, কুশন, জুতা এবং অন্যান্য কাপড়েও ব্যাপকভাবে করা হতো সু এমব্রয়ডারি।
২০ শতকের গোড়ার দিকে, ১৯১২ থেকে ১৯৪৯ সালের মাঝে, সুঝো এমব্রয়ডারি শিল্প কমে যেতে থাকে। ১৯৪৯ সালের দিকে নতুন চীন প্রতিষ্ঠার পর সরকার সুঝো এমব্রয়ডারির প্রসারে এগিয়ে আসে। এসময় সুঝো এমব্রয়ডারি ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়। চীনের স্কুলগামী শিশু-কিশোরেরাও এই সূচিকর্মের প্রশিক্ষণ নেয়। ২০০৬ সালে, সুঝো এমব্রয়ডারিকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজে অর্ন্তভুক্ত করে ইউনেস্কো। চীনে এই সূচিশিল্পের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।