কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই পরিচালিত চ্যাটবট ডিপসিক। চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের মালিকানায় এই অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে চলতি মাসে। মার্কিন চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে অ্যাপল স্টোরে সর্বাধিক ডাউনলোডকৃত ফ্রি অ্যাপ হয়ে উঠেছে এটি। খরচ কম বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এআই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগেই ফেলেছে প্রশ্নের মুখে, তার ওপর ডিপসিকের আচমকা আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা হতবাক করে দিয়েছে খাতসংশ্লিষ্টদের।
অ্যাপটি উদ্ভাবনে কাজ করা গবেষকরা জানিয়েছেন, এটি নির্মাণে মাত্র ৬০ লাখ ডলার খরচ হয়েছে; যে খাতে চ্যাটজিপিটিসহ মার্কিন এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ হাজার কোটি ডলার। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাখাতে হাই-টেক প্রযুক্তিসম্পন্ন চিপের চাহিদা এবং সে অনুযায়ী বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে ডিপসিক। এর প্রভাবে একপ্রকার ধস নেমেছে সারা বিশ্বের পুঁজিবাজারে। এক ধাক্কায় দিনে রেকর্ড প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্য হারিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া, বাজারমূল্যে ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান যেটি। মার্কিন প্রযুক্তি খাতের জন্য ডিপসিকের উত্থানকে সতর্কবার্তা আখ্যা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চীনের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপসিক এইআই বাজারে এলো। আমাদের শিল্প খাতের উচিত একে সতর্কবার্তা হিসেবে নেয়া। প্রতিযোগিতায় যেন জিততে পারি, সেদিকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে আমাদের। কারণ আমাদের রয়েছে বিশ্বের সেরা সেরা বিজ্ঞানী, এমনকি চীনা নেতারাও এ কথা স্বীকার করেন।’
নতুন চান্দ্রবর্ষের ছুটির জন্য এশিয়ার মধ্যে চীন, তাইওয়ান আর দক্ষিণ কোরিয়ায় মঙ্গলবার পুঁজিবাজার বন্ধ। এ অঞ্চলে শীর্ষ পুঁজিবাজারগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর জাপানেও ডিপসিকের প্রভাবে শেয়ারদর নিম্নমুখী। বিপুল মার্কিন বিনিয়োগের সামান্য ভগ্নাংশে ডিপসিকের এ উত্থানে এরই মধ্যে প্রশ্নের মুখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার পরিধি। সোমবার দিনের অর্ধেকেই এআই খাতে একচ্ছত্র আধিপত্যের অধিকারী এনভিডিয়ার শেয়ারদর কমেছে ১৫ শতাংশ; বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর প্রতিষ্ঠান দর হারিয়েছে সাড়ে আট শতাংশ।
অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জ্যাকবসেন বলেন, ‘আমার মনে হয়, হিসাবনিকাশ এখনও বাকি আছে। এ পর্যন্ত যা যা তথ্য আমরা পেয়েছি, সেগুলো যাচাইবাছাই করা দরকার। তবে এটা সত্যি, ডিপসিকের সাফল্যে এটা প্রমাণ হয়েছে যে সাধারণ মানুষের ব্যবহারযোগ্য কিছু বা সংশ্লিষ্ট খাতের উন্নয়নে সম্ভবত শত-কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।’
ডিপসিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটি, গুগলের জেমিনি, মেটার লামাসহ শীর্ষ মার্কিন অ্যাপগুলো। ধারণা করা হচ্ছে, ডিপসিকের সাফল্যে প্রযুক্তি বাণিজ্যের ধারাই পাল্টে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের। এরই মধ্যে সাইবার হামলার শিকার হওয়ায় সাময়িকভাবে নতুন ব্যবহারীর নিবন্ধন সীমিত করেছে চীনা এইআই অ্যাপটি।