তথ্য-প্রযুক্তি
বাজারে সর্বাধিক বিক্রিত মুঠোফোন আইফোন
বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত মুঠোফোন হিসেবে আইফোনের শীর্ষে ওঠার পেছনে মূল কারণ কী? উত্তরটি যদি হয় অ্যাপল স্টোর, তাহলে অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না। তবে ইতিহাস ঘাটলেই মিলবে এই তথ্য।

অনেকের মতে, জন্মের সঙ্গেই অপমৃত্যু দেখে নেয়া আইফোন ১৭ বছরে বাজারে এনেছে ৪২টি মডেল। দীর্ঘ এ সময়ে বিক্রি হয়েছে ২৩০ কোটি বেশি ইউনিট।

২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের স্যানফ্র্যান্সিসকোতে যুগান্তকারী মুঠোফোন হিসেবে আইফোনকে পরিচয় করিয়ে দেন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। ১৭ বছর পর বিশ্বে সর্বাধিক ২০ শতাংশ মুঠোফোনের বাজার দখল করে সে কথাই প্রমাণিত হলো সত্যি হিসেবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিমান্ড সেজের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বিক্রি হয়েছে আইফোনের ৪২টি মডেলের ২৩০ কোটির বেশি মুঠোফোন। যার মধ্যে সচল মুঠোফোনের সংখ্যা ১৫০ কোটিরও বেশি। তবে আইফোনের শুরুর যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিলো না।

ঘোষণার ৬ মাস পর ২০০৭ সালের জুনে বাজারে আসে অ্যাপলের নতুন পণ্যটি। শুরুর কয়েক সপ্তাহে সাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না গ্রাহকদের কাছ থেকে। সে সময়ের অপ্রতিরোধ্য ফিনিশ টেক জায়ান্ট নোকিয়া বছরের শেষ প্রান্তিকে বিক্রি করে ৭৪ লাখ মুঠোফোন। অন্যদিকে আইফোনের বিক্রি ছিলো মাত্র ১৪ লাখ। নোকিয়ার সামনে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা এক ব্যক্তির মন্তব্য ছিলো জন্মের সঙ্গেই অপমৃত্যু ঘটেছে আইফোনের।

তবে এরপরের বছরই ঘুরতে শুরু করে আইফোনের চাকা। কারণ ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত করা হয় অ্যাপ স্টোর। উবারের মতো মর্ডান টেক প্রতিষ্ঠানগুলো এর মাধ্যমে সহজেই গ্রাহকদের অ্যাক্সেস পাচ্ছিলো। অন্যদিকে ব্যবহারকারীরাও এক্সপ্লোর করতে পারছিলেন নতুন নতুন সেবা।

তবে অ্যাপ স্টোরের সক্ষমতা বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলে নোকিয়া। ২০০৯ সালে উন্মুক্ত করা হয় ওভি স্টোর। অন্যদিকে এরও তিনবছর পর ২০১২ সালে প্লে স্টোর চালু করে গুগল। এরই মাঝে অ্যাপল বাজারে নিয়ে আসে নতুন মুঠোফোন আইফোন ফোর এস। ২০১১ সালে ফোর এসের ৭ কোটি ২০ লাখ ইউনিট বিক্রি করে অ্যাপল। ২০১৫ সাল নাগাদ বার্ষিক ২০ কোটি মুঠোফোন বিক্রি করে অ্যাপল।

আইফোন বাজারে আনার ১ দশকের মধ্যেই ১ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান হবার গৌরব অর্জন করে অ্যাপল। ২০০৮ থেকে ২০১৫ সালে অ্যাপলের জন্য এমন এক সময় গেছে, যখন প্রতিষ্ঠানটি স্যামসাংয়ের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে ভয়ে থাকতো। সেই স্যামসাংকেই টপকে গেল মাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত মুঠোফোন তালিকার শীর্ষে উঠে আসে অ্যাপল।

২০২৩ সালকে প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুগের সূচনা বললে হয়তো ভুল হবে না। ওপেন এআইয়ের চ্যাটবট চ্যাট জিপিটি লঞ্চ করার পর থেকেই শুরু হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সফটওয়্যার তৈরির প্রতিযোগিতা। স্যাম অল্টম্যানের প্রতিষ্ঠানটিতে মাইক্রোসফট বিনিয়োগ করেছে হাজারো কোটি ডলার। পিছিয়ে নেই গুগলও। বিশাল তথ্যভাণ্ডার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে আরেক এআই সফটওয়্যার বার্ড নিয়ে।

তবে এআই এর দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপল জিপিটি লঞ্চের পরিকল্পনা নিলেও এখনো তা বাজারে আসেনি। চ্যাটবটটি কবে নাগাদ উন্মুক্ত করা হতে পারে, সে বিষয়েও আসছে না উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তথ্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল না মেলাতে পারলে হয়তো শেষ হতে পারে অ্যাপলের জয়রথ।

এমএসএ
আরও পড়ুন: