স্বাস্থ্য
ক্যান্সারে বছরে এক লাখের বেশি মৃত্যু
দেশে বছরে এক লাখেরও বেশি মানুষ ক্যান্সারে প্রাণ হারাচ্ছেন। অনেকে নিঃস্ব হচ্ছেন চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে।

তিন বছরের ছোট্ট শিশু ত্রিয়া হাসপাতালে কেন এসেছে তা না বুঝলেও টের পায় কেউ একজন তাকে আঘাত (ইনজেকশন) করতে এসেছে। তাই তো কেঁদে কেঁদে আঘাত না দেওয়ার আকুতি তার।

স্বজনদের কষ্ট বাড়লেও আশায় বুক বেঁধে আছেন একদিন সুস্থ হবে। অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক দিন যাপন করবে প্রিয় সন্তান ।

ত্রিয়ার মা বলেন, 'এটা একটা ছোটখাটো টিউমার। কিন্তু যখন আমরা সার্জারি ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করালাম, তখন উনি বাইপসি করতে বললেন। এরপর এটা (ক্যান্সার) ধরা পড়লো।'

হাসপাতালে মায়ের সাথে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুু ত্রিয়া

ত্রিয়ার মতো মরণব্যাধী আক্রান্ত হয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন নুপুর ঝর্ণা, রহমত আলীসহ আরও অনেকে। তাদের অনেকেই শুরুতে বুঝতে পারেনি, কি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ধরা পরে ক্যান্সার। তখন চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগার করা দুরুহ ব্যাপার। অনেকের চিকিৎসা ব্যয়ে শেষ সম্বলটুকুও হারাতে হয়েছে।

ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা বলেন, 'চিকিৎসার জন্য নাকি ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। কিন্তু একলাখ টাকাও তো নাই। ব্যাথা পাওয়ার পর হাত ফুলে গেছিলো, প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছিলো। পরে ভাঙ্গার ডাক্তারের (অর্থপেডিক্স) কাছে নিয়ে যায়। প্রথমে গলা ব্যাথা শুরু হয়, তারপর ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমি দুই বছরের মতো চিকিৎসা নিচ্ছি, এখন আগের চেয়ে ভালো আছি।'

স্বজনরা বলেন, '১০টা কেমো দিতে বলছে। ৪টা কেমোর পরে অপারেশন করার কথা। এমআরআইসহ আরও পরীক্ষা করালাম। এখন ডাক্তার বলতেছে বুকের দিকে রোগটা রয়ে গেছে। তাই অপারেশন করা যাবে না।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি সমন্বিত ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা দরকার। যেখানে প্রয়োজনীয় জনবলসহ শনাক্ত ও পরীক্ষার সব ধরনের সুযোগ–সুবধিা, সব ধরনের থেরাপি ও অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকবে। বাংলাদেশে এমন কেন্দ্র থাকা দরকার ২০০টি কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এমন কেন্দ্র আছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি। এরমধ্যে কেবল সাতটি প্রতিষ্ঠানে পেট–সিটির সুযোগ আছে।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. নিজামুল হক বলেন, '৮টা বিভাগীয় শহরে আটটি ক্যান্সার সেন্টার হবে। যদি এগুলো স্থাপিত হয় তাহলে তিনটা করে রেডিও থেরাপি মেশিন বসবে। কিছুটা হলেও তো লাঘব হবে। আবার মেডিকেল কলেজের পুরাতন মেশিনগুলোকে প্রস্তুত করে নতুন করে বসানো যেতে পারে।'

 

চিকিৎসা ব্যয় বহন করে নি:স্ব হচ্ছেন কেউ কেউ

এখন পর্যন্ত ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কারণ শনাক্ত করা না গেলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা এটি একটি মাল্টি ফ্যাকটোরিয়াল ডিজিজ। জিনগত কারণ, তামাক ছাড়াও কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি বাড়তি ওজন, এছাড়া অনয়িন্ত্রতি জীবন ব্যবস্থা ও খাদ্যাভ্যাস এই অসুখের জন্যে দায়ী।

দেশে বছরে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়। সবচেয়ে বেশি মারা যায় ফুসফুস, খাদ্যনালী, স্তন, লিভার ও জরায়ু কান্সারে। এরমধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। এর পরেই জরায়ু এবং গল ব্লাডারের ক্যান্সার রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে তিন ভাগের এক ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব যদি সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ম মেনে জীবনযাপন করা যায় খাদ্য তালিকায় সুষম ও পুষ্টিকর আঁশসমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি তাজা ফল ও শাকসবজি। ধূমপান তামাক থেকে বিরত থাকতে হবে আর নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সি তরুণ-তরুণী ও ৪০ বছর বয়সী নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

এভিএস