স্বাধীনতার আগে সেই সত্তরের নির্বাচন, কিংবা স্বাধীনতার পর প্রথম ভোট। মানুষের কাছে প্রার্থীর আহ্বান পৌঁছানোর একমাত্র মাধ্যম ছিল প্রেসে মুদ্রিত বা হাতে আঁকা সাদাকালো পোস্টার।
এরপর কেটে গেছে ৫২ বছর। দীর্ঘ এই সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলেছে শহর-গঞ্জ, যোগাযোগের মাধ্যমসহ প্রায় সবকিছু।
তবে এখনো তেমন একটা বদলায়নি প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের কৌশল। এখনো প্রেসের চাকা ঘুরে বেরিয়ে আসা সেই লিফলেট-পোস্টারই প্রাধান্য পাচ্ছে প্রার্থীদের প্রচারণায়। যাতে সময় ও অর্থের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশও।
প্রার্থীর ছবি আর প্রতীক সম্বলিত এক লাখ পোস্টার বানিয়ে পলিথিনে মোড়া পর্যন্ত ব্যয় হয় অন্তত ৭ লাখ টাকা। সমপরিমাণ লিফলেট, স্টিকার আর ব্যাচ তৈরিতে লাগে আরো ৪ লাখ। পাঁচশ কাপড়ের ব্যানার ও একই সংখ্যক পিভিসি তৈরিতে খরচ ৪ লাখ। ৫ হাজার কাপড়ের ফ্লাগ তৈরিতে লাগে ৩০ হাজার। সেই হিসেবে এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ৮ শ' ৯৫ জন প্রার্থীর শুধু পোস্টার-লিফলেটই খরচ হয় অন্তত ২৯০ কোটি টাকা।
ভোটাররা বলেন, 'আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু সনাতনী পোস্টার, লিফলেট থেকে বের হতে পারছি না। প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে আরও আধুনিক হতে হবে।'
পোস্টার-ব্যানারে প্রার্থীদের ব্যয়
এক লাখ করে পোস্টার ও লিফলেট তৈরিতে দরকার ১শ' ১২ রিম কাগজ। সে হিসেবে সব প্রার্থী সমপরিমাণ পোস্টার-লিফলেট তৈরি করলে কাগজ লাগে ২ লাখ ১২ হাজার ২শ' ৪০ রিম। যা ছাপাতে লাগবে ১ লাখ ৮ হাজার ১৫ পাউন্ড কালি। এছাড়া কুয়াশা থেকে বাঁচাতে পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা। যাতে রয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা।
সচেতন মানুষরা জানান, কাগজ তৈরিতে গাছ লাগে। আর প্রত্যেক প্রার্থী নিজস্ব পোস্টার বাঁচাতে পলিথিন ব্যবহার করছেন। এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। নির্বাচন কমিশন যদি দায়িত্ব নেয় তাহলে সমভাবে এই প্রচারণা হবে।
তবে মোবাইল ফোনে ক্ষুদে-বার্তা কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার ব্যয় খুব সীমিত হলেও তেমন আগ্রহ নেই প্রার্থীদের।
জেলায় তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান আলফা নেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল হায়দার বলেন, '৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৩ জন নির্বাচনী প্রচারের জন্য ডিজিটাল সহায়তা নিয়েছেন। তারা এগিয়েও যাচ্ছে।'
বগুড়া সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হাসান বলেন, 'নির্ধারিত মাপের সাদাকালো পোস্টার এবং ব্যানার তৈরি করতে পারবে। ডিজিটাল প্রচারণার জন্য কোন নিয়মনীতি নেই।'
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ২৭টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র মিলে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শ' আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৮শ ৯৫ জন প্রার্থী।