বর্ষা পরবর্তী মৌসুমে খাল বিলের পানি কমতে শুরু করলে ধরা পরে নানান জাতের ছোট মাছ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এসব বিলুপ্ত হতে বসেছে। বিলুপ্তি ঠেকাতে মাছ সংরক্ষণ ও কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছে বগুড়ার সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। পুকুরে চাষ করেও মেটানো যাবে দেশীয় ছোট মাছের চাহিদা।
গ্রামে বেড়ে ওঠা শিশুদের অন্যতম মজার স্মৃতি খেলার ছলে মাছ ধরা। শুষ্ক মৌসুমে খাল,বিলের পানি কমে যখন তলানিতে ঠেকে তখন শিশুরা দল বেধে মাছ ধরতে নামে। শিশুরা সবচেয়ে সহজে ধরতে পারে শান্ত স্বভাবের মাছ মেনি বা ভেদা। ভেদা মাছ দিয়েই হাতে খড়ি হতো মাছ শিকারিদের। কিন্তু ভেদাসহ স্বাদু পানির প্রায় ৬৪ প্রজাতি ছোট মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
বাতাসি, পেয়ালি, মেনি বা ভেদা এই মাছগুলো আর শিকারিদের জালে ওঠে না। নানান কারণেই বিলুপ্তপ্রায় এই মাছগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে সান্তাহার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। পোনা উৎপাদনে সফলও হয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের একটি পুকুরে ভেসে বেড়াচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় খরসলা মাছ। এই পুকুরগুলোতে খরসলার মতো ১৯ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। নদী-নালা, খাল-বিল থেকে মাছগুলো হারিয়ে গেলেও প্রজননের মাধ্যমে এখান থেকে আবারো পোনা সরবরাহ করা যাবে। তাছাড়া এই মাছগুলো পুকুরে চাষ করেও মেটানো যাবে ছোট মাছের চাহিদা।
বগুড়া প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এখন বাজারে গেলে এ মাছগুলো কম দেখা যায়। আগে এগুলো অনেক দেখা যেত। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে এই ৪০টি মাছ চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা। আশা করি তখন এই ৪০ টা মাছ বাজারে পাওয়া যাবে।’
বগুড়ার সান্তাহার প্লাবন উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিশির কুমার দে বলেন, ‘একক চাষে হয়ত হাইলি গ্রোথ কম হলেও অন্যান্য মাছের সঙ্গে সমন্বিতভাবেও চাষ করা সম্ভব। যেকোনো চাষি বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের থেকে পোনা নিয়ে থাকে।’
জলবায়ু পরিবর্তন,অনাবৃষ্টি,ফসলে ব্যবহার করা কীটনাশকসহ বিভিন্ন কারণে এই মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি থেকে। পুকুরে চাষ করা গেলেও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে মাছের প্রজনন ক্ষমতা,স্বাদ ও রং। তাই প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে যেন এই মাছগুলো হারিয়ে না যায় সেজন্য প্রতি বছরই খালবিলে ছাড়া হয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের পোনা।
বগুড়ার সান্তাহার প্লাবন উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডেবিট রিন্টু দাস বলেন,‘যে মাছ প্রায় হারিয়ে গেছে তখন আমরা গবেষণা করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সে মাছের পোনা উৎপাদন করে আবার প্রকৃতিতে ছেঁড়ে দেব। বাংলাদেশের কোথাও ভেদা মাছ নেই কিন্তু আমাদের এখানে আছে। আমরা প্রতিবছরে রক্তদহ বিলে ৫০ থেকে ১ লাখ পোনা ছেড়ে থাকি।’
স্বাদু পানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ছোট মাছ ১৪৩ প্রজাতির। তার মধ্যে ৬৪ প্রজাতি ছোট মাছ বিলুপ্তির পথে।মাছগুলোর বিলুপ্তি ঠেকাতে সচেতন হতে হবে সবার।