শিক্ষার্থীদের পর এবার রাস্তায় শিক্ষকরা। সংকট কাটছেই না রাজধানীর সাত কলেজের। এবার নতুন জটিলতা শুরু হয়েছে সাত কলেজকে ঘিরে জারি করা অধ্যাদেশ নিয়ে।
এক সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালে শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। সেখান থেকেই শুরু জটিলতা। সেশনজট, পরীক্ষার আয়োজন না করা কিংবা ফলাফল প্রকাশে বিলম্বসহ একের পর এক দুর্বিষহ শিক্ষাজীবন নেমে আসে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীর জীবনে। বাধ্য হয়ে রাজপথে নামতে হয় তাদের।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর একটি হাইব্রিড বিশ্ববিদ্যালয় মডেলের অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। যেখানে বলা হয়, ৭ কলেজের নাম হবে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। সাতটি কলেজে থাকবে সাতটি অ্যাকাডেমিক ক্যাম্পাস। ঢাকা, ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজ মিলে গঠিত হচ্ছে স্কুল অব সাইয়েন্স। আর্টস ও হিউম্যানিটিজের অধীনে থাকা বিষয়গুলো পড়ানো হবে বাংলা কলেজে। স্কুল অব বিজনেস পরিচালিত হবে তিতুমীর কলেজ থেকে। কবি নজরুল ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ক্যাম্পাসে থাকছে স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস। এখান থেকে শুরু নতুন আরেক বিতর্ক।
ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষার এ দুটি প্রতিষ্ঠান সংকুচিত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে নারী শিক্ষা।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, তারা এ কলেজে ভর্তি হয়েছে কারণ এটি শুধু নারীদের জন্যই। এখানে পুরুষ শিক্ষার্থী না থাকার কারণে এ কলেজে পড়ছেন তারা।
আরও পড়ুন:
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, যে সকল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা চালু আছে তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। এটি নিয়েও রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের শঙ্কা।
এবার রাজপথে নামা সাত কলেজের শিক্ষকদের আরেক আশঙ্কা, প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হওয়ার পাশাপাশি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদটিও পড়ে যাবে বিপাকে।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘একটি নয় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় হোক সেটি আমাদেরও দাবি। তবে সেটি কলেজ ক্যাম্পাসে কেন? চাইলেই ঢাকার যেকোনো স্থানে জায়গা অধিগ্রহণ করে আমরা সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারি।’
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোতে যেসব ত্রুটি আছে তাতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন তো হবেই না। বাড়বে শিক্ষার বাণিজ্যকরণ বলছেন শিক্ষাবিদরা।
ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ক ম রফিকুল আলম বলেন, ‘এখানে ছাত্র সংখ্যা অনেক কমে যাবে। ৭ কলেজে বর্তমানে দুই লাখ শিক্ষার্থী পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় হলে এ সংখ্যাটি ৭ থেকে ৮ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। এ শিক্ষার্থীগুলো তখন কোথায় যাবে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে বলি এ কলেজগুলোর কোনো কন্ট্রিবিউশন নেই, তবে আমার কাছে মনে হয়, যেকোনো কর্মক্ষেত্রেই যান; আপনি দেখবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় গ্রুপ সেখানে কাজ করছে।’
তবে প্রস্তাবিত এ কাঠামো নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ আছে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী প্রশাসক।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির (প্রস্তাবিত) প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ‘প্রয়োজনে শিক্ষক, শিক্ষক নেতা, ছাত্র- সকলকে নিয়ে মতামত নেয়া হবে তাহলে নেগেটিভ বিষয়গুলো দূর করা সম্ভব হবে।’
আগামী ২ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত খসড়ার ওপর অংশীজনরা মতামত দিতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।





