চাকসু নির্বাচন: নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থী-শিক্ষার্থীরা

চাকসু ভবন, নিরাপত্তা দপ্তর
চাকসু ভবন, নিরাপত্তা দপ্তর | ছবি: এখন টিভি
1

তিন যুগ পর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচন। পাহাড় বেষ্টিত এ ক্যাম্পাসে নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী। এতে গ্রামবাসীসহ বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতে চাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তর থাকলেও ঢাল নেই- তলোয়ার নেই অবস্থা। সেজন্য নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে সেনা মোতায়েনের দাবি।

আগস্টের শেষ দুদিন স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষের ব্যাপকতা এবং হতাহতের সংখ্যা মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি ৬০ বছর বয়সী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম।

সামনে আরও একটি বড় আয়োজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ৩৬ বছর পর ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাকসু নির্বাচন। পাহাড় বেষ্টিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু জায়গায় নেই সীমানা প্রাচীর। অনেক প্রবেশ পথও অরক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা দপ্তর নামে একটি স্বতন্ত্র দপ্তর থাকলেও শিক্ষার্থীরা এটিকে বলছেন ঠুঁটো জগন্নাথ। এমন অবস্থায় চাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ শিক্ষার্থীদের।

চাকসু স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের ভিপি পদপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসের সবচেয়ে বড় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে এ প্রশাসনের অধীনে। এ জায়গা থেকে আমরা এখনও শঙ্কিত যে আসলে প্রশাসন কতটুকু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।’

চাকসু দ্রোহ পর্ষদের ভিপি পদপ্রার্থী ঋজু লক্ষী অবরোধ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আমাদের যে নিরাপত্তারক্ষী আছে, পাশাপাশি প্রশাসন যদি মনে করে যে এখানে পুলিশ বাহিনী থাকতে পারে। কিন্তু আসলে একটা ছাত্রসংসদ নির্বাচনে যতটুকু নিরাপত্তা দরকার ততটুকু যেন তাকে সেটা আমরা চাই।’

এরইমধ্যে নিরাপত্তা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে চবি প্রশাসন। এ নিয়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈঠক সম্পন্ন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আলোচনার সূত্র ধরেই সাজানো হবে নিরাপত্তা পরিকল্পনা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. কামাল উদ্দীন বলেন, ‘বাহিরের কেউ যেন নির্বাচনকে ইনফ্লুয়েন্স করতে না পারে কোনো দল, মত, গোষ্ঠীর। সে জায়গা থেকে আমরা বদ্ধপরিকর। আলাদা লেয়ারে আমরা সে কাজগুলো করবো। আমরা হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের কোনো জটলা তৈরি করা বা কোনো ধরনের বহিরাগত এসে এখানে পরিবেশ বিনষ্ট করাকে আমরা একেবারে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে বন্ধ করার জন্য আমরা কাজ করছি।’

আরও পড়ুন:

চাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন সাড়ে ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ভোটের আগে প্রচারণায় চলবে কথার লড়াই। সেজন্য প্রচারণার সময় থেকেই সার্বিক নিরাপত্তা ও ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের।

চাকসু সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের ভিপি পদপ্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘এখানে ভোটাররা ঘুরে বেরাচ্ছে, প্রার্থীরা ঘুরছে। তারা বিভিন্ন জনের কাছে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, যদি সকলেই মনে করে যে একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস দরকার, এর জন্য পুলিশ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার মাধ্যমে একটা নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

চাকসু ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী শাফায়াত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে সে পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়র ৩০ হাজার শিক্ষার্থী একসঙ্গে ক্যাম্পাসে থাকবেন। সেজন্য আমি মনে করি বাইরে থেকে ফোর্স নিয়ে আসাই ভালো’

চাকসু নির্বাচনের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত অংশ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও ওই দিন শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ইস্যুকৃত পাশ ও স্টিকার ছাড়া ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না কোনো যানবাহন।

এসএস