১৭৫ একর ক্যাম্পাস জুড়ে দেখা যায়, পালকিতে চড়ে বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রদর্শন, লাঙল কাঁধে ও কাস্তে হাতে নিয়ে নানা গান ও লোকগীতি কৃষকদের র্যালিতে অংশগ্রহণ, শাড়ি পরে গ্রাম্য নারীদের সাজে সজ্জিত হওয়া, কোমরে গামছা বেঁধে ও কাঁধে মাছ শিকারের জাল নিয়ে জেলেদের জীবন যাত্রা, হাতে ছাতা নিয়ে পাঞ্জাবী, লুঙ্গি ও টুপি পরা জমিদারের পথ চলা সহ ঢেঁকি, কুলা, ঢোল ও তবলা ইত্যাদি বাঙালি জাতির নানান ঐতিহ্য। এ যেন একটি প্রাচীন গ্রাম-বাংলার অভূতপূর্ব দৃশ্য, যাতে যে কোনো দর্শনার্থীর চোখ জুড়িয়ে যাবে। নতুন সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাস।
বিশেষ করে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, মুসলিম সহ সকল ধর্মের শিক্ষার্থীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বৈশাখি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ যেন বাঙালি জাতির এক অসম্প্রদায়িক চেতনার ধারকবাহক। এ যেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। যা বাঙালি জাতির ঐক্যের বার্তা দেয়।
২৪ এর জুলাই বিপ্লবে আবু সাঈদ-মুগ্ধরা যে অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে স্বপ্ন বুনছেন, ইবিতে উদযাপিত বাংলা নববর্ষ যেন সেই একই সুরে গাঁথা। যেখানে সকল ধর্মের মানুষ এক সারিতে এবং এক লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মাঝে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সত্ত্বা পরিচয় দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
হয়ত এটা পুথিগত শিক্ষা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জন করে দেশে ও দশে সেবা দিতে পারার মতো সক্ষমতা তৈরির কারখানা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী নজরুল সেজেছেন। তিনি জানান, 'নজরুল হলো বাংলাদেশের সংস্কৃতির অঙ্গণে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমাদের মেসেজ সবাইকে নিয়ে ভাবা। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা।'
আরেকজন শিক্ষক বধূ সেজে আসেন। তিনি বলেন, 'আমি বধূ সেজেছি বর্তমান গ্রামের মেয়েরা এভাবে প্রজন্মকে আগলে রাখেন। যার সামাজিকীকরণে তাদের অবদান বেশি।'
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, 'গত বছরের সকল গ্লানি-বৈষম্য-অন্ধকার-অনাচার মুছে যাক। নতুন পরিকল্পনা ও শপথে আগামী দিনে আমরা এগিয়ে যাব। আগামী বাংলাদেশকে আমরা বৈষম্যমুক্ত দেখতে চাই। বৈশাখ নতুন আলোর বার্তা নিয়ে এসেছে। আমাদের সবার আগামী দিনের জীবন আনন্দ-আলো-উচ্ছ্বাসে ভরে উঠুক। আমরা আগামী দিনে যে বাংলাদেশ গড়ব সেই বাংলাদেশ হবে আজকের এই বৈশাখের প্রত্যয়ে ও শপথে নতুন বাংলাদেশ।' ঐক্যের ও মৈত্রীর, গ্লানির ও দুর্নীতিমুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার শপথ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'এই চমৎকার আয়োজনে আমি ব্যক্তিগতভাবে অভিভূত। আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল অংশীজনের সর্বজনীন ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উচ্ছ্বসিত শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি পরিবর্তিত বাংলাদেশের ফলাফল। আর এই পরিবর্তিত বাংলাদেশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের কাছে ঋণী।'
লেখা: ওবাইদুল্লাহ আল মাহবুব, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।