কারিকুলামকে বলা হয় শিক্ষার সংবিধান। সংবিধান দিয়ে যেমন রাষ্ট্র পরিচালনা হয়, তেমনি কারিকুলামকে ঘিরে চলে দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা। আগামী প্রজন্ম কীভাবে গড়ে উঠবে তার পুরো রূপরেখা থাকে সেখানে।
বাংলাদেশ জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের কারিকুলাম পরিবর্তন হয়েছে বহুবার। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সে সরকারই তার দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে এ শিক্ষাকে। বহুমুখী শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত দক্ষ জনগোষ্ঠীও তৈরিতে রয়ে গেছে দুর্বলতা।
সব শেষ পতিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত শিক্ষাক্রমে যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সক্ষমতা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে সম্পূর্ণ নতুন একটি কারিকুলাম চাপিয়ে দেয়া হয়। দিনশেষে লেজেগোবরে অবস্থায় ব্যর্থ হয় সেই অপরিকল্পিত কারিকুলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘এ কারিকুলামটা ক্যারি করবে কে?? শিক্ষক। ওইরকম শিক্ষক, ওইরকম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছিল না বলেই কিন্তু ওই কারিকুলামটা ফেল করেছে।’
আরও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই কারিকুলাম বাতিল করে ফিরে যায় ২০১২ সালের পাঠক্রমে। এ অবস্থায় ২০২৭ সাল থেকে শ্রেণিকক্ষে আবারও নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও কেনিয়ার কারিকুলাম পর্যালোচনা করছে এনসিটিবি। কিন্তু সেই নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ এখন কতদূর?
এনসিটিবি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘কারিকুলাম ডেভেলপমেন্টের অনেকগুলো স্টেজ আছে। চাহিদা নিরূপণ বা পরিস্থিতি পর্যালোচনার যে জায়গাটা আছে সে জায়গায় কাজ চলছে। সবারই মতামত এখানে গ্রহণ করা দরকার। সে গ্রহণ করার লক্ষ্যে আমাদের যে প্রক্রিয়া। সে প্রক্রিয়ার কাজগুলো চলছে।’
কিন্তু কোন ভিত্তিতে আবারও তৈরি হচ্ছে নতুন কারিকুলাম? শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা কমিশন কিংবা শিক্ষানীতি ঠিক না করে কারিকুলাম করলে তা আবার মুখ থুবড়ে পড়বে।
আরও পড়ুন:
অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা কোন পর্যন্ত থাকবে, কী শেখানো হবে না হবে। পুরো নির্দেশনা থাকবে হলো শিক্ষা নীতিতে। এ জিনিসগুলো করার জন্য সবার আগে দরকার হলো একটা শিক্ষা কমিশন। আমি পাঁচটা দেখে একটা কারিকুলাম বানিয়ে ফেললাম, এতে হবে না।’
নির্বাচিত সরকারের অধীনে কারিকুলাম তৈরির পরামর্শ আরেক শিক্ষাবিদের। তড়িঘড়ি নয়, সক্ষমতা বাড়িয়ে ২০২৮ এ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। একমুখী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতেও আহ্বান তার।
শিক্ষা গবেষক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যে ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব শিক্ষা ব্যবস্থা একটি ছাতার নিতে আসবে। বেসিক কতগুলো বিষয়, যে বিষয়গুলো সবাই পড়বে। কওমী মাদ্রাসার বিষয়, এটা থাকবে, এটা ছিল, ধর্ম ওখানে পড়ানো হবে। কিন্তু এর অর্থ এ না যে আমাদের জাতীয় কারিকুলামের বাংলা, ইংরেজি, গণিত ওখানে পড়ানো হবে না।’
তেমন কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া বারবার পাঠক্রম পরিবর্তনে শিক্ষার মান নিচের দিকেই নামছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।





