সুরভীর চোখে কৌতূহল, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার হাতছানি। দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাতে চান যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইংল্যান্ডে। শিক্ষামেলায় এসে পছন্দের দেশ সম্পর্কে খুঁটিনাটি যাচাই করে নিচ্ছেন তিনি। দেশে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষে উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশ যেতে বিভোর এই তরুণী।
সুরভীর মতো দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছেন দেশের অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল গ্রাজুয়েশন বিদেশে করবো। আমেরিকা, কানাডায় যাওয়ার জন্য এখন আবেদন করছি।’
স্বপ্ন যখন তারুণ্যের, প্রস্তুতি হওয়া চাই বিশ্বমানের। শিক্ষা মেলায় বিপুল শিক্ষার্থীর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, বিদেশযাত্রায় তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ তুঙ্গে। যাদের বেশিরভাগের প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ নানা পশ্চিমা দেশ। তবে খরচও কম নয়, স্কলারশিপ না থাকলে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়।
শুধু উচ্চশিক্ষাই নয়, ভবিষ্যতে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশযাত্রায় ইচ্ছুক মেধাবীদের অনেকেই ফিরতে চান না দেশে। অন্যদের তুলনায় দেশে তরুণদের স্বপ্নপূরণে সুযোগ-সুবিধা কম তা স্বীকার করলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশে সুযোগ কম, বিদেশে শ্রমটাকে মূল্যায়ন করা হয়। তরুণ-তরুণীরা নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য বিদেশে যেতে চায়।’
এদিকে দেশের বাজারে দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশযাত্রায় দিন দিন অনেক চাকরিজীবীদের আগ্রহ বাড়ছে।
এক চাকরিজীবী বলেন, আমি পেশায় ডাক্তার। আমার ইচ্ছা ইউরোপের কোন দেশে যাবো। দুইটা বেবি আছে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবো এমন দেশেই যাবো। তবে আমার স্বপ্নের দেশ ডেনমার্ক।
বিভিন্ন দেশ, অঞ্চল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে উচ্চশিক্ষার খরচের ধরন একেক রকম। স্কলারশিপসহ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাচেলর কোর্স করতে একজন শিক্ষার্থীর গুণতে হবে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকা। আর মার্স্টাসে খরচ পড়বে ১২ থেকে ১৩ লাখ। লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স করতে গুণতে হবে ১৬ থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। আর কানাডায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স আর ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে কমবেশি খরচ হবে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়ার উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে শিক্ষার্থীদের খরচ হেবে ১৪ থেকে ১৭ লাখ টাকা। নিউজিল্যান্ডে ব্যাচেলর কোর্সের খরচ প্রায় ১৪ লাখ এবং মাস্টার্স করতে খরচ হবে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স কোর্সে দেশভেদে একজন শিক্ষার্থীকে খরচ করতে হবে প্রায় ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা।
এদিকে বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্নপূরণে, ভিনদেশে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হয় অনেককে। এরইমধ্যে যারা পাড়ি জমিয়েছেন নানা দেশে, কেমন আছেন সেই প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা?
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আব্দুল বাকী বলেন, ‘ভাষার দূরত্ব তো থেকেই যায়। পড়াশোনাসহ নিজের কাজগুলোও সামলাতে হয়।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'ফ্রান্সে ১০ শতাংশ মানুষও ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে চায় না। এজন্য অবশ্যই ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি জব করার সুযোগ থাকলে তো খুবই ভালো। তবে এখানে জব ম্যানেজ করা খুবই কঠিন।'
তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে অনেক দেশই দিচ্ছে নানা স্কলারশিপ। যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় বেশ জনপ্রিয় বৃত্তিগুলো হলো ‘কমনওয়েলথ ও শেভেনিং স্কলারশিপ’। জাপানে রয়েছে মনবুশো স্কলারশিপ। এছাড়া কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতে মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ চালু রয়েছে। এসব শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীরা অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি, বাসস্থান খরচ, স্বাস্থ্য বিমা ও ভ্রমণসহ মাসিক ভাতা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে সহায়তা করছে কনসালটেন্সি ফার্ম। নির্দিষ্ট ফি'র বিনিময়ে সেবা দিচ্ছেন তারা। কনসালটেন্সি ফার্মগুলো বলছে, আগের তুলনায় বিদেশে পড়তে যাওয়ার হার বাড়ছে।