একের পর এক সফরে তিন ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফর করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। ঋণে জর্জরিত দেশকে উদ্ধারে বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে মিত্রদের বোঝানোর চেষ্টায় আছে পাক সরকার। এর আগে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সমন্বয়ে বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা কাউন্সিল গঠন করেন শেহবাজ শরীফ।
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এমনিতেই বিপাকে পাকিস্তান। ব্যাংকে ডলার নেই। জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা। বেকারত্ব ও চরম মূল্যস্ফীতিতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ জনগণ। এমন অবস্থায় নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঋণ পরিশোধে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় দুই বছর ধরে ভুগছে দেশটি।
দেশটির অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বলেন, 'আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের আলোচনা চলছে। তাদের ঋণ পরিশোধের বিষয়টি বাজেটে রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ইতিবাচক। তবে চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে কিছুই বলা যাবে না।'
চলতি জুন মাসে পাঁচ দিনের সফরে চীনে যান পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। সফরে বিভিন্ন খাতে চীনের সঙ্গে ২৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে পাকিস্তান। এছাড়া পাকিস্তান সীমান্তে চীনের বেশকয়টি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প চালু আছে। গত ১০ বছরে চীনের ওপর উল্লেখযোগ্য হারে নির্ভরতা বেড়েছে পাকিস্তানের। একসময়কার সামরিক সম্পর্ক এখন রূপ নিয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও। পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক ঋণের ২৩ শতাংশ চীনের।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, 'চীন ও পাকিস্তান ভালো বন্ধু ও প্রতিবেশি দেশ। চীন সবসময় পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত ও কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত চীন।'
গত এপ্রিলে সৌদি আরব সফরে গিয়ে সৌদি প্রিন্সের সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক করেন শেহবাজ শরীফ। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তানের আশা তেল শোধনাগার, কৃষি, খনি, বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি ও বিমান চলাচলসহ ছয়টি ভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবে সৌদি সরকার। তবে কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এরপর একদিনের সফরে দুবাই যান শেহবাজ শরীফ। পাকিস্তানের বিভিন্ন খাতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে কোন খাতে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করবে এবং এর সময়সীমা সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
দেশটির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ না পেলে ৩.৬ মাত্রার প্রবৃদ্ধির হার পূরণ করতে পারবে না পাকিস্তান। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার সমাধান না হলে তাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে না। তখন বিদেশি বিনিয়োগেও কোনো ফল আসবে না।