গত ১৬ বছর আওয়ামী সরকারে নানা মেগা প্রকল্পের সাক্ষী চট্টগ্রাম নগর। উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শহরের মানচিত্রে এসেছে পরিবর্তন।
নগরের বুক চিরে নির্মিতব্য এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে, উপকূল ঘেষা দুটি আউটার রিং, বাড়ইপাড়া খাল খনন বা সিডিএ'র জলাবদ্ধতা নিরসনের বড় বড় প্রকল্প, সবই এই নগরকে পাল্টে দেয়ার নামে আওয়ামী সরকারের গেম চেঞ্জিং পরিকল্পনা হিসেবেই ধরা হয়।
বিগত সরকার আমল থেকে চট্টগ্রাম নগরকে ঘিরে চলছিল নানা উন্নয়নযজ্ঞ। যেসবের অধিকাংশই বাস্তবায়ন করছিল সিডিএ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ছোট বড় এসব প্রকল্পের মধ্যে ৬ টিই হলো মেগা প্রকল্প, যেগুলোর আকার প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। এত বিপুল অর্থের চলমান এসব প্রকল্পের ভাগ্যে, পরিবর্তিত এই বাস্তবতায় কী ঘটতে চলেছে সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনেই। নানা জটিলতায় বছর বছর ব্যয় বাড়া এসব প্রকল্প নিয়ে এমনিতেই দীর্ঘ ক্ষোভ জমে আছে নগরবাসীর। জলাবদ্ধতা বা যানজটের মতো নানা দূর্ভোগ থেকে যেসব প্রকল্প আমাদের অনেক আগেই মুক্তি দেয়ার কথা ছিলো, সেগুলো কী আবারও নতুন করে আবারও দীর্ঘসূত্রিতায় নিমজ্জিত হবে নাকি গতি পাবে?
সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, 'সরকারি প্রজেক্টগুলোতে সরকারি লোকদের কাজ দিতে হতো এগুলো থেকে আমরা এখনমুক্ত। স্বাধীনভাবে এখন কাজ করতে পারছি।'
নগরের মেগা প্রকল্পগুলোর অধিকাংশের দায়িত্ব নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সিডিএ'র। আওয়ামী লীগে সরকারের আমলে এই সংস্থার অধীনে নেয়া হয়েছ ২০ হাজার কোটি টাকার ২৫ টি প্রকল্প। ইতিমধ্যে ১৯টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ চলছে ছয়টির। এসব প্রকল্পের কোনোটিই নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় বছর বছর ফুলে ফেপে উঠেছে ব্যয়।
তবে চলমান প্রকল্পগুলো বাতিল বা কাজ বন্ধ হওয়ার কোন শঙ্কা নেই দাবী সংস্থাটির কর্মকর্তাদের।
সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী বলেন, 'বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্ব বুঝে সেই প্রজেক্টগুলো আগে। আমাদের মনে হচ্ছে বাজেটে কোনো সমস্যা হবে না।'
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় চলছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার একাধিক মেগা প্রকল্প। যার মধ্যে বাড়ইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ায় এখন এর ব্যয় দাড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকায়। এমন প্রকল্পের উদাহরণ টেনে করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, রাজনৈতিক নানা চাপ ও প্রভাবের কারণে প্রকল্প এগিয়েছে হতাশার গতিতে। তবে নতুন সরকারের আমলে এসব প্রকল্প গতি পাবে এমন আশা তাদের।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'সবচেয়ে বড় প্রজেক্ট হচ্ছে এয়ারপোর্টসহ রাস্তা উন্নয়নের প্রজেক্ট। এইটা হচ্ছে প্রায় ২৪শ’ কোটি টাকার প্রজেক্ট।'
নগর পরিকল্পনাবিদের মতে এসব প্রকল্পে টেকসই উন্নয়নের চেয়েও দৃশ্যমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে এত এত উড়ালসড়ক না করে আরও বেশি সার্কুলার রোড বা সড়ক উন্নয়ন গুরুত্ব পেলে তা আরও সুফল বয়ে আনতো।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে টানেল একটি মাইলফলক হলেও , টানেল থেকে টোল বাবাদ দৈনিক আয় প্রায় ১২ লাখ টাকা, যেখানে ব্যয় হচ্ছে দিনে ৩৭ লাখ টাকা। দৈনিক গড়ে ২৬ হাজার গাড়ি চলাচলের কথা থাকলেও, বর্তমানে চলছে মাত্র সাড়ে চার হাজার। বর্তমানে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পগুলোও কতোটা সুফল বয়ে আনবে, তা যাচাই বাছাই এর পরার্মশ নগর পরিকল্পনাবিদদের।