চুক্তি
অর্থনীতি
0

সাত বছরের প্রচেষ্টায় খনিজ বালুর ইজারা পায় অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি

নদ-নদী থেকে উত্তোলিত বালু মূলত বিভিন্ন স্থাপনা-রাস্তাঘাট নির্মাণ কাজ, গর্ত ভরাটের মতো কাজেই ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের সেই বালু এখন অমূল্য সম্পদ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন দেশের বিভিন্ন নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলে খনিজ বালুর অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে তখনও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি।

অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি 'এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড' যখন উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় ২ হাজার ৩৯৫ হেক্টর বালুচর ইজারা চেয়ে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোতে আবেদন করে- তখনই আলোচনায় আসে বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত গত ২০ জুন ৭৯৯ হেক্টর বালুচর (গাইবান্ধা খনিজ খনি) ইজারা আবেদন মঞ্জুর করে এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডকে ২৮টি শর্তে ৫টি খনিজ আহরণের অনুমোদন দেয় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো-বিএমডি। আহরণের পর যার ৪৩ ভাগ বাংলাদেশ আর বাকিটা পাবে ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান।

যেখান থেকে জিরকন, রুটাইল, গারনেট, ম্যাগনেটাইট ও ইলমেনাইট এ পাঁচ ধরণের খনিজ বালু আহরণ করতে পারবে। মূলত মূল্যবান এসব খনিজ বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করে সারা বিশ্ব। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের বালুতে প্রাপ্ত এসব খনিজ পদার্থ থেকে সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও মোল্ডিং সেন্ডস, রং, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস, ওষুধ উৎপাদন, সিরিশ কাগজ, লোহাজাতীয় পাইপ পরিষ্কার, বালুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ব্যবহার হয়।

এছাড়া চুম্বক উৎপাদন, ইস্পাত উৎপাদন, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা পরিষ্কার করা ও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গভীর কূপ খননে যেমন ব্যবহার হয়; তেমনি টিটেনিয়াম মেটাল তৈরি, ওয়েল্ডিং রড তৈরি ও রং উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার হয়।

অবশ্য একদিন, দুইদিন বা বছর নয়, এই খনিজ বালু আহরণের জন্য টানা সাত বছর ধরে অপেক্ষা করছিলো এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড। এজন্য দেশে এবং বিদেশে একাধিক সভা-সেমিনারসহ বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ টানা সাত বছর খনিজ বালুর পেছনে দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর আর এভারলাস্টের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হলো।

২০ অক্টোবর-২০১৭: এভারলাস্ট মিনারেল লিমিটেডের সিনিয়র কনসালটেন্ট মুমিনুল্লাহ (সাবেক ডিরেক্টর ব্যুরো অব মিনারেল ডেভেলপমেন্ট) গাইবান্ধায় অনুসন্ধানস্থল পরিদর্শন করেন।

ডিসেম্বর-২০১৭: ২০১৭ সালে ডিসেম্বরের শুরুতে, অস্ট্রেলিয়ান মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, জর্জ এডওয়ার্ডসের নেতৃত্বে এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের (ইএমএল) একটি প্রতিনিধি দল- ৩ জন বাংলাদেশী, ৩ জন অস্ট্রেলিয়ান ও ৭ জন চীনা নাগরিক সহ সিনিয়র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশে আসেন।

তখন এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড-(ইএমএল) বাংলাদেশে খনিজ বালি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে খনিজ বালির জন্য একটি অনুসন্ধান লাইসেন্সের জন্য তাদের করা আবেদন এবং বিদ্যুৎ প্রকল্প, বিল্ডিং প্রকল্প এবং আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন।

প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে দেশে একটি খনিজ বালি শিল্পের বিকাশের বিষয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. কাজী এম. আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী, খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো’র পরিচালক মো. আব্দুল কাইয়ুম, সিনিয়র ভূতত্ত্ববিদ ও বিএসএমইসি'র পরিচালক ড. মোহাম্মদ রাজীব, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ড. রেশেদ মো. একরাম আলী, বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ড. খোরশেদ আলমের সাথে আলোচনা করেন।

জানুয়ারি ২০১৮: ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো’র (বিএমডি) কর্মকর্তাদের একটি দল এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের অনুসন্ধান সাইট পরিদর্শন করেন এবং খনি ও খনিজ বিধি ২০১২ অনুযায়ী বিএমডিকে একটি প্রতিবেদন জমা দেন।

মার্চ ২০১৮: এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুইজন সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারীর সাথে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম. খায়রুল হোসেন এবং সিকিউরিটিজ কমিশনে একই কমিশনের কমিশনার প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীর সাথে দেখা করেন।

মে ২০১৮: ২০১৮ সালের ৪ মে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) এবং গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার উপজেলা পরিষদের সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের অনুসন্ধানের স্থান পরিদর্শন করে এবং গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন।

জুন ২০১৮: অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ফিজির বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমানের সাথে দেখা করেন এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এপ্রিল ২০১৯: ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর।

জুন ২০১৯: ২০১৯ সালের ২৮ জুন সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ান মাইনিং অ্যাসোসিয়েশন এবং অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে টেকসই বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে এএমএ’র পরিচালক ও কোষাধ্যক্ষ (এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান) পল কিয়ান, এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান জর্জ এডওয়ার্ডস, বাংলাদেশের হাইকমিশনার এইচই মোহাম্মদ সুফিউর রহমান, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মো. সাইফুল্লাহসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মার্চ ২০২০: ২০২০ সালের ৫ মার্চ এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার টিটু ও মহাব্যবস্থাপক বাহার বিশ্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আজিজ হাসান, সিনিয়র প্রফেসর ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ এবং সিনিয়র প্রফেসর ড. মুহাম্মদ কামরুল হাসানের সাথে বৈঠক করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার পরিদর্শন করেন।

জুলাই ২০২০: ২০২০ সালের ১৪ জুলাই এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পল কিয়ান সিডনিতে প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উপদেষ্টা এবং বিনিয়োগকারীর সাথে বৈঠক করেন।

এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পল কিয়ান পরদিন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলমের সাথে বৈঠক করেন।

সেপ্টেম্বর ২০২০: যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের গাইবান্ধা অংশে ৪ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে খনিজ বালি অনুসন্ধানের জন্য ২০২০ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো’র সাথে এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের মধ্যে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদে খনিজ বালি অনুসন্ধানের চুক্তি সম্পাদিত হয়।

বিএমডির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাফর উল্লাহর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইএমআরডির সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান, বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান। ভার্চুয়াল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন, এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ও অস্ট্রেলিয়ান মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জর্জ এডওয়ার্ডস, এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পল কিয়ান এবং এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন অংশ নেন।

আগস্ট ২০২১: ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড সিএসআর প্রোগ্রাম চালু করে। এভারলাস্টের চেয়ারম্যান পল কিয়ানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (এমপিইএমআর) সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান।

নভেম্বর ২০২১: ২০২১ সালের ১৮ নবেম্বর খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো’র মহাপরিচালক মো. নুরুন্নবী এবং উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ এভারলাস্ট খনিজ অনুসন্ধান প্রকল্প পরিদর্শন করেন।

ডিসেম্বর ২০২১: ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর এভারলাস্ট খনিজ অনুসন্ধানের অগ্রগতি নিয়ে গাইবান্ধায় এসকেএস ইন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা এবং অপারেশন টিম একটি 'প্রেজেন্টেশন এবং ডিসকাশন নাইট' এর মাধ্যমে সমস্ত স্টেকহোল্ডারকে খনিজ অনুসন্ধানের অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে সবাইকে অবগত করে।

অনুষ্ঠানে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল হাসান, জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মতিন, সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদেকুর রহমান, গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রফিউল আলম এভারলাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার এইচ টিটু ও মহাব্যবস্থাপক বাহারুল আলম বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (এমপিইএমআর) সিনিয়র সচিব (ইএমআরডি) মো. আনিসুর রহমান।

একইদিনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান এভারলাস্ট খনিজ অনুসন্ধান প্রকল্প পরিদর্শন করেন।

সেপ্টেম্বর ২০২২: ২০২২ সালের জুনে অনুসন্ধান এলাকায় সমস্ত সর্পিলাকার সরঞ্জাম আসার পরে, বিদেশি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সরঞ্জামগুলো বসানোর জন্য প্রায় দুই মাস সময় লাগে।

পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহৃত জল ব্যবহার করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সর্পিলাকার যন্ত্রাংশগুলো বসানোর পর সফলভাবে কমিশনিং সম্পন্ন হয়। তারপর টিএইএমকে আরও পরিমার্জিত করার জন্য একটি কাঁপানো টেবিল বসানো হয়। কাঁপানো টেবিল ইন্টিগ্রেশনের সাথে টিএইএম গুণমান উন্নত করা হয়।

এভারলাস্ট ২০২২ সালের অক্টোবরে একটি চৌম্বক বিভাজক অর্ডার করে এবং ডিসেম্বরে অনুসন্ধান এলাকায় পৌঁছে যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের (বিসিএসআইআর),ইনস্টিটিউট অফ মাইনিং, মিনারোলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’র সাথে সমঝোতা স্মারকের অধীনে একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেপারেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে খনিজ বালু থেকে ছয়টি খনিজ- জিরকন, রুটাইল, ইলমেনাইট, গারনেট, ম্যাগনেটাইট এবং কোয়ার্টজ আলাদা করা হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অস্ট্রেলিয়ায় খনিজ নমুনা পাঠানো হয়।

অক্টোবর ২০২২: অস্ট্রেলিয়ান ল্যাবরেটরিতে মোট ১৮৯৫টি নমুনা (১২৫০ কেজি) প্রেরণ করা হয় এবং ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর মোট ২০৬৫টি পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়। এরপর আরও স্বনামধন্য ব্যক্তি দ্বারা যৌগিক নমুনাগুলোর আরও ভিএইচএম বিশ্লেষণ করা হয় অস্ট্রেলিয়ান একটি ল্যাবরেটরি।

প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, ৩০ মিটার গভীরতায় অনুসন্ধান এলাকায় (৪০০০ হেক্টর) গড় টিএইচএম প্রায় ৮.৫ ভাগের কাছাকাছি এবং গড় ভিএইচএম আনুমানিক ৪.৮১ ভাগ, গড় গারনেট প্রায় ৮,৭৪ ভাগ এবং গড় ম্যাগনেটাইট পাওয়া যায় ১.৭৯ ভাগ।

নভেম্বর ২০২২: স্বাধীন ভূতত্ত্ব রিপোর্ট এবং খনিজ সম্পদ অনুমান: মিসেস অ্যালিসন কোল এবং জিওসমিনিং ও তার দল তখনও পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে খনির মডেলিং ও কম্পাইলের কাজ করছিলো। এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক এবং সিনিয়র ভূতত্ত্ববিদ, বাহার বিশ্বাস, অ্যালিসনের সাথে তখন ভূতত্ত্ব প্রতিবেদনের খসড়া তৈরি করছিলেন।

২০২২ সালের ২০ এবং ২৩ নভেম্বর অ্যালিসন এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধিদের সাথে একত্রে গাইবান্ধায় অনুসন্ধান এলাকা, খনিজ বালি গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা অফিস এবং গুদাম পরিদর্শন করেন।

২৩শে নভেম্বর বিকেলে, বাংলাদেশ কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড এবং বিসিএসআইআর বাংলাদেশে খনিজ বালি শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতামূলক কাজের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান।

জানুয়ারি ২০২৩: বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বুয়েট) ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (আরআইএসই) এবং এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের মধ্যে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ভিএইচএম’র উপর যৌথ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং(আরআইএসই), বুয়েটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান তালুকদার এবং এভারলাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার এইচ টিটু সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. ফাহমিদা গুলশান, ড. মো. মুক্তাদির বিল্লাহ, ড. সেলিনা, ড. সারমিন এবং এভারলাস্টের সিনিয়র উপদেষ্টা ড. খায়রুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক মো. বাহারুল আলম বিশ্বাস এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ফেব্রুয়ারি ২০২৩: খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো’র (বিএমডি) কর্মকর্তারা ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এভারলাস্টের গবেষণা কেন্দ্র এবং অনুসন্ধান এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের পর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে একটি সুপারিশ জমা দেওয়া হয়।

মার্চ ২০২৩: ২০২৩ সালের ১১ মার্চ এভারলাস্টের খনিজ গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ইনস্টিটিউট অফ মাইনিং, মিনারোলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’র (বিএসআইআর) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জামান। ১৭ মার্চ একই গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির।

এভারলাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার এইচ টিটু বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর সিনিয়র সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারের কাছে এভারলাস্টের পাইলট স্পাইরাল প্ল্যান্টের একটি মডেল হস্তান্তর করেন। অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবির, যুগ্ম সচিব মো. নায়েব আলী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ফিরোজ হাসনা এবং এভারলাস্ট সিনিয়র উপদেষ্টা ড. খায়রুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক মো. বাহারুল আলম বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।

এপ্রিল ২০২৩: ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল অনুসন্ধান এলাকা পরিদর্শন করেন খনি অনুমোদনের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মনোনীত সচিব ও মন্ত্রলায়ের উপ-সচিব মি. বেলায়েত।

জুন ২০২৩: এভারলাস্ট পাবনা জেলায় খনিজ বালি অনুসন্ধান লাইসেন্সের জন্য তৃতীয় আবেদন করেছে। খনিজ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক জনাব মো. আবুল বাশার সিদ্দিক আকন্দ এবং উপ-পরিচালক জনাব মো. মামুনুর রশীদ প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেন। খনিজ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক জনাব মো. আবুল বাশার সিদ্দিক আকন্দ এবং উপ-পরিচালক জনাব মো. মামুনুর রশীদ কুড়িগ্রাম জেলার খনিজ বালির জন্য প্রস্তাবিত ২য় অনুসন্ধান স্থান পরিদর্শন করেন। এভারলাস্টের ব্যবস্থাপনা দলও প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেছে।

বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী গাইবান্ধার ২৩৯৫ হেক্টর বালুচরকে তিন ভাগে বিভক্ত করার পর সবশেষ গত ২০ জুন গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলায় বালাসী: ব্লক-এ এলাকায় ৭৯৯ হেক্টর এলাকা ১০ বছরের জন্য এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেডের অনুকুলে ইজারা মঞ্জুর করেন খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো’র মহাপরিচালক আব্দুল কাইয়ুম সরকার। তবে বাকি ব্লক দু’টির বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

এভারলাস্ট মিনারেলস লিমিটেড সুত্র জানায়, এখন খনিজ বালু আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ এবং প্ল্যান্ট স্থাপনের বিষয়ে ভাবছেন তারা। আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে খনিজ বালু আহরণের কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে তারা আশাবাদী।