বিদেশে চাহিদা থাকায় আশির দশকের সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক হারে শুরু হয় বাগদা চিংড়ির চাষ। সেসময় থেকেই চিংড়ির পাশাপাশি সীমিত পরিসরে কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করা হতো। তবে নানা কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমতে শুরু করে চিংড়ির। বিকল্প হিসেবে ২০১৪ সালে সাতক্ষীরার একটি খামারে প্রথম প্লাস্টিকের খাঁচা পদ্ধতিতে সফটশেল কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়।
শুরুতে চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই জাতের কাঁকড়ার চাহিদা বেড়েছে। অল্প জমিতে স্বল্প বিনিয়োগে কাঁকড়া চাষের সুযোগ থাকায় প্রতিবছরই বাণিজ্যিক এই খামারের সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে জেলার ৩৬৫টি খামারে চাষ করা হচ্ছে। যেখান থেকে গেল বছর ৮ লাখ ২২ হাজার ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোটাতাজাকরণ ও সফটশেল কাঁকড়ার বাণিজ্যিক উৎপাদন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যা ফ্রোজেন অবস্থায় রপ্তানি করা হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ এবং সিঙ্গাপুরে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে বেশি।
কাঁকড়া চাষিদের একজন বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হয় বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে।’
বাংলাদেশে ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। এরমধ্যে শিলা কাঁকড়ার চাষ করা হয়। যার পোনা ও ক্র্যাবলেট বা ছোট কাঁকড়া সংগ্রহ করতে হয় প্রাকৃতিক উৎস সুন্দরবন থেকে। তবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমের কারণে প্রতিবছর ৫ মাসের বেশি সময় সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকে। সে সময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন খামারিরা।
সুন্দরবনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে হ্যাচারিতে কাঁকড়া পোনা উৎপাদন প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। তাতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে, তেমনি খামারের সংখ্যা, কাঁকড়ার উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি এম সেলিম বলেন, ‘পোনা ও ক্র্যাবলেট বা ছোট কাঁকড়া অধিকাংশ সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করে থাকে। এর পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার কক্সবাজারে একটা হ্যাচারি তৈরি করেছে।’
খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জাহিদুল হাসান বলেন, ‘আমরা এখানে সুস্থ সবল কাঁকড়া উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।’
সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় কাঁকড়া চাষ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে কাঁকড়া চাষের নতুন নতুন পদ্ধতি বের কারার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ একুয়াকালচারের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়েছে। তবে কাঁকড়া চাষের জন্য এখানে নেই পর্যাপ্ত হ্যাচারি। পাশাপাশি চাষিদের দিতে হবে আর্থিক সহায়তা।
ব্রুনাইয়েল সুলতান শরিফ আলী ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মো. বদরুল মুনির বলেন, ‘আমরা একটা পদ্ধতি তৈরি করেছি যেখানে বাঁশের বক্স তৈরি করে একটা বক্সে একটা কাঁকড়া চাষ। যা প্রাকৃতিক পরিবেশে পুকুরে বড় হচ্ছে।’
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়নে ৩৬৫টি বাণিজ্যিক কাঁকড়া খামার গড়ে উঠেছে। যেখানে বছরে ২ হাজার টন কাঁকড়া উৎপাদন হচ্ছে। এসব খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০হাজার মানুষের।