যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট জেলা নড়াইলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। প্রথমে পদ্মা সেতু পরে কালনায় মধুমতি সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা।
এশিয়ান হাইওয়ের ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল সড়কের নড়াইল অংশে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা শিল্প প্রতিষ্ঠান করার জন্য জমি কিনতে শুরু করেছে। তিন বছর আগের ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা শতাংশের জমি এখন ৩ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, 'পদ্মা সেতু এবং মধুমতি সেতু তৈরি হওয়ার পরেই এখানের জমির দাম পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পকেট জোন হিসেবে এই জায়গাগুলোকে বেছে নিয়েছে। এতে বেকার এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে।'
গত তিন অর্থবছরে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল সড়কের নড়াইল অংশের ২৯ কিলোমিটার সম্প্রসারণ, ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নড়াইল-মাগুরা ১৬.৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন এবং ১১২ কোটি টাকা খরচ করে নড়াইল-ফুলতলা ২৫.৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করেছে নড়াইল সড়ক বিভাগ। আর এতেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে গেছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ বলেন, 'নড়াইলের মূল সম্ভাবনা হচ্ছে বেনাপোল ও এশিয়ান হাইওয়ে। বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় নড়াইলের গুরুত্ব তোলে ধরার জন্য এই দুইটা যথেষ্ট।'
বিগত বছর গুলোর তুলনায় নড়াইলে দলিল সম্পাদনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি সরকারি রাজস্ব কয়েক কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২১ সালে মোট ১৯ হাজার দলিল সম্পাদন হয় এবং রাজস্ব এসেছিল ৫৪ কোটি টাকা। আর ২০২২ ও ২৩ সালে জেলায় দলিল সম্পাদন হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার এবং অন্তত ১২০ কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে।
নড়াইল জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুর রকিব সিদ্দিক বলেন, 'অনেকেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার উদ্যোগ নিচ্ছে। এ কারণে বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে দলিল রেজিস্ট্রির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।'
একটি মাস্টার প্ল্যান করে শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং কালনা পয়েন্টে ১৫৮ একর জমি নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নড়াইল শহরে সাড়ে তিন শত একর জমি নিয়ে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা এগুচ্ছে বলে জানান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. হাসানউজ্জামান। বলেন, 'এখানে বিসিক শিল্প নগরী হবে। এটা চালু হলে জমি একটুও ফাঁকা থাকবে না। বড় বড় শিল্পকারখানা হবে।'
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, 'সরকারিভাবে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা নিয়েছি। বেসরকারি পর্যায়ে যে শিল্প উদ্যোক্তারা আসবেন সে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হলে নড়াইলের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে।'
সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত নড়াইল অংশ সরাসরি ভূমিকা রাখছে। ভারত, কোলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে এ সড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ।