বেশ কয়েক বছর ধরে শুল্ক বাড়ানোর তোড়জোর ছিল চট্টগ্রাম বন্দরের। ২০২০ সালে হালনাগাদ ট্যারিফের প্রস্তাবনা দেয় বন্দরের নিযুক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
অর্থ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ৫৬টি সেবা খাতে গড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বাড়িয়ে নতুন ট্যারিফের প্রজ্ঞাপন জারি করে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃর্পক্ষ, যা এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে।
তবে একযোগে এতো ট্যারিফ বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। সবচেয়ে বেশি সেবার মূল্য বেড়েছে কন্টেইনার ওঠানো নামানো, পরিবহন, টাগ বোট সার্ভিস ও পাইলট চার্জ, জাহাজ ভিড়ানো ও ক্রেন চার্জে।
কোনো কোনো সেবার মূল্য ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে শিপিং এজেন্টরা বলছেন, ট্যারিফ বেশি হলে জাহাজ ও কন্টেইনার ভাড়া বাড়ায় আমদানি-রপ্তানিতে খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘এ ধরনের মাশুল বৃদ্ধি করা হলে জাহাজ ভাড়া এবং জাহাজে যে পণ্য পরিবহন করা হবে, সেগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি হবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা উচিত ছিল। আমরা গেজেটটি পেয়েছি। আমাদের সঙ্গে যে সর্বশেষ আলোচনা ছিল, আমরা সেখানে বলেছি, যদি একেবারে বাড়াতেই হয়, ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি যেন বাড়ানো না হয়। আজকে গেজেটে দেখলাম তারা গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। ভোক্তা এবং আমদানি-রপ্তানিকারকদের ওপর এটা বর্তাবে।’
হালনাগাদ ট্যারিফে মুরিং ও হ্যাচ চার্জসহ কয়েকটি সেবায় চার্জ আরোপ করা হয়, যা আগে ছিল না।
আরও পড়ুন:
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি বেসরকারি ডিপোগুলো ট্যারিফ বাড়িয়েছে ৪৫ শতাংশ। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো বন্দরের সেবার মূল্য, যা রপ্তানি খাতকে চ্যালেঞ্জে ফেলবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘দাম বাড়লে বায়াররা অন্যত্র চলে যাবে, কারণ তাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমাদের শুধু দাম বাড়ালেই হবে না, দেশের ইকোনমি সাস্টেইন করার জন্য, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’
বন্দর কতৃর্পক্ষ বলছে, ১৯৮৬ সালের পর ৫টি ছাড়া আর কোনো খাতে ট্যারিফ বাড়েনি। বিনিয়োগ ও পরিচালন ব্যয় বাড়ায় ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১২ পয়সা, যাতে নিত্য পণ্যের দাম বাড়বে না বলেও মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘ভোক্তা পর্যায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না। এজন্য আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বিশ্লেষণ করেছি যে, চট্টগ্রাম বন্দরের চার্জ যদি হিসাব করা হয়, আমাদের কার্গোতে প্রতি কেজিতে বর্তমান শুল্ক অনুযায়ী মাত্র ৩২ পয়সা খরচ হয়। বৃদ্ধির পর এর পরিমাণ হয়েছে ৪৪ পয়সা। মাত্র ১২ পয়সা বেড়েছে প্রতি কেজিতে। তাই আমাদের মনে হয়, ভোক্তাদের জন্য এ ১২ পয়সা বেশি দেয়া কোনো বিষয় নয়।’
সমুদ্রপথে ৯৯ শতাংশ কনটেইনার পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ায় প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারে বাড়তি দিতে হবে গড়ে ৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। সব মিলিয়ে কন্টেইনার প্রতি গড়ে মাশুল দিতে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা।



