আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস আমদানি, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

বাংলাদেশে কসমেটিকসের বাজার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা, যার বেশিরভাগের যোগান আনুষ্ঠানিক, উৎসহীন। আবার এসবের বেশিরভাগই নকল ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা। এতে ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া দেশিয় গহনার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় এই বাজার ছেয়ে গেছে ভারত ও চীনের ইমিটেশনের গহনায়। এসব পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে উদ্যোক্তা এবং শিল্পগোষ্ঠীদের এগিয়ে আসার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

মেঠোপথ ধরে সত্তর ঊর্ধ্ব মুন্নাফ মিয়ার ছুটে চলা দুই যুগেরও বেশি। শরীর আগের মতো সায় না দিলেও এখনও গ্রামে গ্রামে ঘুরে লেইসফিতা, চুরি, মালা, গহনাসহ নানা প্রসাধনী বিক্রি করেন তিনি।

ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত গ্রামের দাসপাড়ায় তাকে ঘিরে নারীদের ভিড় হয়। আলতা, লিপস্টিক বা গহনা; নিক বা না নিক পরখ করে দেখবার স্বাধ তাদের।

একজন নারী বলেন, 'মার্কেটে এই জিনিসগুলোর অনেক দাম। কিন্তু ফেরিওয়ালা দাদু যে আসে তার কাছে দাম কম। পোলাপানদের কিনে দেই তার কাছ থেকেই। এতেই ওরা অনেক খুশি হয়।'

একসময় আবহমান গ্রামীণ নারীদের সাজসজ্জাসহ বিয়ের সদাইয়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই ফেরিওয়ালারা। তবে কালের আবর্তে পেশা বিলুপ্ত হওয়ায় পরিবারের কয়েক পুরুষের ব্যবসার ইতি টানছেন মুন্নাফরা।

ফেরিওয়ালা মুন্নাফ মিয়া লেইসফিতা নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রামের পথে। ছবি: এখন টিভি

মুন্নাফ মিয়া বলেন, 'আজ থেকে ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেছি। কিন্তু এখন তো দাম বেড়ে গেছে। আগে এক টাকা জোড়া চুরি বিক্রি করেছি। এখন তো সেটা হয় না।'

একজন ফেরিওয়ালা বলেন, 'এখন আস্তে আস্তে ফেরিওয়ালা কমে গেছে, এখন এই ব্যবসার মধ্যে কিছু নেই।'

বিক্রির ধরন বদলালেও গহনা আর সাধনীর বাজার ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকা। ময়মনসিংহের চকবাজারে প্রতিদিন বিক্রি হয় লাখ লাখ টাকার পণ্য। যার বেশিরভাগই আমদানি করা। তবে নকলের ভিড়ে আসল চেনা দায়। যাতে প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়েন ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা।

একজন ক্রেতা বলেন, 'স্বর্ণ আসলে সৌখিনতা। কিন্তু এখন যেভাবে দাম বাড়ছে এটা আর এখন সৌখিনতা বলা যায় না।'

একজন বিক্রেতা বলেন, 'ক্যাশ টাকা দিয়ে যে বেচাকেনা হতো সেটা হচ্ছে না। আর এখন আমাদের বাকির পরিমাণ বেশি হচ্ছে।'

বিশ্বে কসমেটিকসের বর্তমান বাজার সাত ট্রিলিয়ন ডলারের। আর দেশে স্কিন কেয়ার ও কালার কসমেটিকসের মোট চাহিদা ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মে মাসে ২০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপের পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কসমেটিকস পণ্যের আমদানি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। যাতে বেড়েছে সব ধরনের প্রসাধনীর দাম। এমন অবস্থায় নকলের পাশাপাশি অবৈধভাবে আনা হচ্ছে এসব পণ্য।

বিউটিশিয়ান ও উদ্যোক্তা ইশরাত দোলা ইমা বলেন, 'দামি দামি যে ক্রীম, শ্যাম্পু আছে সেগুলোর অনেক কপি এখন বাজারে আছে। আমাদের ক্রেতারা বিদেশি পণ্যের প্রতি বেশি ঝুঁকে গেছে।'

ময়মনসিংহ কসমেটিকস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফখর উদ্দিন বলেন, 'কসমেটিকসের বাজার এখন একটু কম। তবে আছে। আবার শীতে একটু বেশি হয়। আমরা চাই দেশিয় পণ্যগুলো আরও প্রসারিত হোক।'

নকল কসমেটিক ও কালোবাজারি রোধে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদের। সেই সাথে ইমিটেশনের গহনার বাজার সম্প্রসারণে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশিয় উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি শিল্প গোষ্ঠীদের এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, 'দেশিয় কোম্পানিগুলোও ভালো কসমেটিকস তৈরি করছে। কিন্তু তারা যদি আর একটু কোয়ালিটির দিকে নজর দেয় সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে বাংলাদেশের মানুষের এখন যে ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে তারা সেটা অ্যাফোর্ট করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আমাদের ইমপোর্ট নির্ভরতা কমবে। ফরেন কারেন্সি সেভ হবে।'

নীতিগত সহায়তা ও স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় কর সুবিধা পাওয়া গেলে চাহিদা পূরণে গড়ে উঠতে পারে দেশিয় শিল্প। যার মাধ্যমে আরো ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর