'সেই মনে পড়ে, জৈষ্ঠ্যের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম, অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।' রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো এখন জৈষ্ঠ্যের ঝড়ে আম কুড়াবার ধুম পড়ে কি না তা জানা না থাকলেও, সকালে উঠে আম বাগানীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেকের। বাগান থেকে কাঁচা আম পেড়ে কেউ নিয়ে যান হাটে, কেউবা আবার সরাসরি পাঠিয়ে দেন ভোক্তার কাছে।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নওগাঁর পাশাপাশি রংপুরের হাড়িভাঙা আমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিনকে দিন। এ বছরের শুরুতে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিও মিলেছে সুস্বাদু এই আমের। আশ কম এবং প্রচুর মিষ্টতার কারণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছে এই আম।
বাগানিদের একজন বলেন, 'আমের যে ছাল আছে তা একদম পাতলা। এই কারণেই আমটি সুস্বাদু।'
মৌসুমের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এসে জড়ো হন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জে। নিজেরা দেখে শুনে বাগান থেকে সংগ্রহ করেন ভাল মানের আম। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সেই আম পৌঁছে যায় সারা দেশে।
ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, 'সোর্সিং বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কাস্টমারের সাথে ক্লিয়ার রাখি পণ্যটা আসলে কোন জায়গা থেকে নিচ্ছি।'
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই প্রথম জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশে আম রপ্তানির খবর সাড়া ফেললেও বেশ কয়েক বছর ধরেই হাড়িভাঙা যাচ্ছে বিদেশে। ভারতের পাশাপাশি সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়মিতই যাচ্ছে আম। এবছর নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও জার্মানিতে আম রপ্তানি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতেও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে হাড়িভাঙা আম। তবে, বেশিরভাগ আম রপ্তানিকারকরা নিজেদের মতো করে পাঠানোয় সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। এখন পর্যন্ত ৯০০ কেজি আম পাঠানো হয়েছে বলছেন তারা।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, মৌসুম শেষ না হলে ঠিক কী পরিমাণ আম রপ্তানি হয়েছে তা বলা মুশকিল। আর শুধু হাড়িভাঙার তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে। সব ধরনের ফল মিলিয়ে গত বছর জুলাই থেকে এবছর মে পর্যন্ত রপ্তানি থেকে প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে।
আমের মতো পচনশীল পণ্য পাঠাতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় রপ্তানিকারকদের। আম সংগ্রহ থেকে শুরু করে কাঙ্ক্ষিত দেশে পৌঁছানো পর্যন্ত আম ভাল রাখতে নির্ভর করতে হয় বিমান পরিবহনের ওপর। গতবছরের ২০ শতাংশ প্রণোদনা কমে এবছর ১০ শতাংশ হওয়ায় আম রপ্তানিতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রপ্তানিকারকদের।
আম রপ্তানিকারক সাজেদুর রহমান রেদোয়ান বলেন, 'গত তিন বছর ধরে মক্কাতেও আম পাঠাচ্ছি। এখানকার থেকে ওইখানে যাতায়াতসহ খরচ পরে যায় প্রতি কেজিতে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। সরকারের যে ট্যাক্স আছে তা কমিয়ে দিলে বিদেশের বাজার সহজে ধরা যাবে।'
অন্য আমের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় দ্রুত পচে যায় হাড়িভাঙা। এটার মেয়াদ বাড়াতে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আর আমের রপ্তানি বাজারকে সুদৃঢ় করতে রপ্তানি নীতিতে পরিবর্তন ও ছাড়ের কথা বলছেন উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, 'যারা ফল নিয়ে গবেষণা করে থাকেন তারা এইটা নিয়ে গবেষণা করছেন কীভাবে বেশি হাড়িভাঙা আম সংরক্ষণ করা যায়।'
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই রংপুরের হাড়িভাঙা আম দেশের গণ্ডি পেরিয়েছে। এতদিন আশে পাশের দেশ থাকলেও তা এখন ইউরোপে পাড়ি দিচ্ছে।